৭৫ লাখ শিক্ষার্থীকে এ মাসের মধ্যে টিকা

শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে এ মাসের মধ্যে সরকার ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী ৭৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে করোনার টিকা দিতে চায়। এই টিকা দিতে এখন শিক্ষার্থীদের টিকা নিবন্ধনের নিয়মও শিথিল করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর তৈরি তালিকা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা টিকা নিতে পারবে।

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। এখন কারা ক্লাসে যেতে পারবে সে বিষয়েও কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, আগামীকাল বুধবারের পর টিকা ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী ক্লাসে যেতে পারবে না।

যাদের টিকা দেওয়া হয়নি, তারা আপাতত অনলাইনে বা টেলিভিশনে ক্লাস করবে
১২ বছরের কম বয়সীদের ক্লাসও আপাতত চলবে
পরিস্থিতি দেখে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা

পরে টিকাদানের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের তালিকা মাউশিতে এসেছে। এই তালিকা টিকা নিবন্ধনসংশ্লিষ্ট দপ্তরেও পাঠানো হয়েছে। এখন নির্ধারিত দিনে শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে টিকা নিতে পারবে। টিকা দেওয়ার তারিখ সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শিক্ষার্থীদের আগেই জানিয়ে দেবে।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিফাইল ছবি

করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের মার্চে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি শুরু হয়েছিল। টানা প্রায় দেড় বছর বন্ধের পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সীমিত পরিসরে ক্লাস হচ্ছে। পরীক্ষাও হয়েছে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে কম বিষয়ে ও কম নম্বরের ভিত্তিতে। কিন্তু এখন আবার সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে গত রোববার রাতে করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিসহ শিক্ষা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, দেশে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী মোট শিক্ষার্থী আছে ১ কোটি ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৩২২ জন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছে ৪৪ লাখ শিক্ষার্থী। আর পূর্ণ দুই ডোজ টিকা পেয়েছে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৪ শিক্ষার্থী। বাকি ৭৫ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৬ শিক্ষার্থীর এখনো প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া বাকি আছে।

ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়, এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে না। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে সীমিত পরিসরে চলছে, সেভাবেই চলবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয় ওই বৈঠকে।

গতকাল সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা বিধিনিষেধে বলা হয়েছে, ১২ বছরের ঊর্ধ্বে সব শিক্ষার্থীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত তারিখের পর টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী আন্তমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, আগামীকাল বুধবারের (১২ জানুয়ারি) পর করোনার টিকা ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী ক্লাসে যেতে পারবে না। তবে যাদের টিকা দেওয়া হয়নি, তারা আপাতত অনলাইনে বা টেলিভিশনে যে ক্লাস হয়, সেগুলোয় অংশ নেবে। সবার অন্তত এক ডোজ টিকা নেওয়া হলে সবাই সশরীর ক্লাস করবে।

অবশ্য টিকাদানের নির্ধারিত সময়ের আগে শ্রেণিকক্ষে টিকা সনদের বাধ্যবাধকতা নিয়ে শিক্ষার্থী–অভিভাবকদের মধ্যে বৈষম্যবোধ কাজ করতে পারে বলে মনে করেন কেউ কেউ। কারণ, টিকা দেওয়ার কাজটি হচ্ছে সরকারি ব্যবস্থাপনায়। শিক্ষার্থীরা চাইলেও কোথাও গিয়ে টিকা নিতে পারবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে করোনাসংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সহিদুল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ৩১ জানুয়ারি মধ্যে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় চাইলে ওই সময়ের পর শিক্ষার্থীদের টিকা সনদের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি কার্যকর করতে পারে।

পূর্ণ দুই ডোজ টিকা পেয়েছে ৪ লাখ শিক্ষার্থী

মূলত ১৮ বছরের বেশি বয়সী মানুষকে টিকা দিয়ে আসছিল সরকার। পরে সরকার বিশেষ ব্যবস্থায় গত বছরের পয়লা নভেম্বর থেকে ১২ থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু করে। শিক্ষার্থীদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, দেশে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী মোট শিক্ষার্থী আছে ১ কোটি ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৩২২ জন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছে ৪৪ লাখ শিক্ষার্থী। আর পূর্ণ দুই ডোজ টিকা পেয়েছে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৪ শিক্ষার্থী। বাকি ৭৫ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৬ শিক্ষার্থীর এখনো প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া বাকি আছে।

এখন সব শিক্ষার্থীকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে অন্তত এক ডোজ টিকা নেওয়ার কর্মসূচি নিল সরকার। এর মধ্যে ৩৯৭টি উপজেলা বা থানায় ১৫ জানুয়ারির মধ্যে, ৩ উপজেলায় ১৭ জানুয়ারির মধ্যে, ৫৬ উপজেলা বা থানায় ২০ জানুয়ারির মধ্যে, ১৫ উপজেলা বা থানায় ২২ জানুয়ারির মধ্যে, ৩৫ উপজেলা বা থানায় ২৫ জানুয়ারির মধ্যে এবং ১১ উপজেলা বা থানায় ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ওই বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদান শেষ হবে।

এ সময়ের মধ্যে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া সম্ভব কি না, জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক কমিটির সদস্যসচিব মো. শামসুল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আলোচনা করেই সময়সূচি ঠিক করা হয়েছে। তাঁরা আশা করছেন, এই সময়ের মধ্যে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী সব শিক্ষার্থীকে টিকাদান শেষ করা যাবে।

তিন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আজ সভা

জাতীয়, উন্মুক্ত ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ৯৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। আর জাতীয়, উন্মুক্ত ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকা দেওয়ার বিষয়ে আজ মঙ্গলবার সভা ডাকা হয়েছে।
তবে কওমি মাদ্রাসাগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে না থাকায় সেগুলোতে নির্দেশনা মানার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তদারক করা হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

১২ বছরের কম বয়সীদের ক্লাস চলবে

১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ১২ বছরের কম বয়সীদের কী হবে, সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ১২ বছরের কম বয়সীদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো অনুমতি দেয়নি। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিদ্ধান্তের জন্য সরকার অপেক্ষা করবে। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা এ বিষয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ করছে এবং এখনো কোথাও সংক্রমণের তথ্য পায়নি। কাজেই আপাতত ক্লাস চালিয়ে যাবে। একই সঙ্গে পরিস্থিতিও পর্যবেক্ষণ করা হবে।

চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা সীমিত পরিসরে নেওয়া হবে বলে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এসব পরীক্ষা বছরের মাঝামাঝি হতে পারে। তবে সেটি পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে।

সূত্র : প্রথম আলো

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments