আরও ৫ ইঞ্চি উচ্চতা বাড়াতে করণীয়

ডায়েট, ব্যায়াম ও ওজন কমানো–বাড়ানো নিয়ে পাঠকদের নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান ।

প্রশ্ন: আমি একজন মেয়ে। আমার বয়স ১৩ বছর ৬ মাস। উচ্চতা পাঁচ ফুট আধা ইঞ্চি, ওজন ৪৪ কেজি। আমি আরও পাঁচ–ছয় ইঞ্চি লম্বা হতে চাই। সে জন্য আমার দৈনিক খাদ্যতালিকা কেমন হবে? সেই সঙ্গে কখন কী ধরনের ব্যায়াম করা উচিত, সে সম্পর্কে জানতে চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ঢাকা

শামছুন্নাহার নাহিদ

শামছুন্নাহার নাহিদছবি: প্রথম আলো

উত্তর: ১৩ বছরে একটা মেয়ের উচ্চতা বাড়ানো সম্ভব। তবে প্রথমেই আসি উচ্চতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ, সেই আলোচনায়। আমাদের উচ্চতা বৃদ্ধির ৬০-৮০ শতাংশ জেনেটিক (বংশগত), যা মা–বাবা বা তার আগের প্রজন্ম থেকে পেয়ে থাকি। এখানে আমাদের করার কিছু থাকে না। বাকি ৪০-২০ শতাংশ সঠিকভাবে জীবনযাপন ও পুষ্টির ওপর নির্ভর করে বাড়ানো সম্ভব।

সুষম খাদ্যাভ্যাস: সুষম খাদ্যাভ্যাস মানে হলো শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী সব কটি পুষ্টি উপাদান (প্রোটিন, শর্করা, ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেল) সঠিক অনুপাতে প্রতিদিনের খাবারে রাখা। অর্থাৎ কোন বেলায় কোন খাবার, কতটা খেতে হবে, তা জেনে খেতে হবে। কোনো একটা খাবার বেশি খাওয়া বা অন্য একটা বাদ দেওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে যেমন প্রোটিন–জাতীয় খাবার (মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, বাদাম ইত্যাদি) শরীরের সব ধরনের বৃদ্ধির জন্য জরুরি। তাই বলে তুমি যদি শুধু বেশি বেশি প্রোটিন খেতে থাকো আর এনার্জি পেতে শর্করা এবং ফ্যাট আনুপাতিক সমতায় না খাও, তখন তোমার প্রোটিন আগে এনার্জি দেবে (যা শরীরে প্রথম প্রয়োজন)। ফলে সেই প্রোটিনের ঘাটতিতেই তোমার শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হবে। অন্যদিকে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি হাড়ের ঘনত্ব বাড়িয়ে উচ্চতা বাড়াতে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করে। এর মানে তোমার খাবারে প্রতিদিন ক্যালসিয়াম (দুধ বা দুধজাতীয় খাবার, ছোট মাছ, ছোলা ইত্যাদি) ও ভিটামিন ডি দরকার। ভিটামিন ডি পেতে পুরো ডিম, মাছ, রান্নার তেল ইত্যাদি খেয়ে, রোদ গায়ে লাগাতে হবে (কারণ, ভিটামিন ডি তৈরি করতে সূর্যরশ্মি লাগে)। পাশাপাশি তুমি প্রতিদিন খাবারে জিংক (বাদাম, বীজ–জাতীয় খাবার) রাখলে উচ্চতা বাড়াতে অনেক সাহায্য করবে।

সেই সঙ্গে কিছু খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে। এর মধ্যে আছে জাংক ফুড, ড্রিংক–জাতীয় খাবার, যা সুষম খাবারের কাজে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

আরও পড়তে পারেন :

এক ক্লিকেই জেনে নিন জমি নিবন্ধন খরচের হিসাব

ব্যায়াম: উচ্চতা বাড়াতে প্রতিদিন ব্যায়াম করা জরুরি। বিশেষ করে স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ, যা মেরুদণ্ডকে লম্বা করতে সাহায্য করে। ঝুলে থাকা, সাঁতার কাটা, দড়িলাফ, জগিং, বাস্কেটবল, ভলিবল, কিছু যোগব্যায়ামের চর্চা করতে হবে। এসব অভ্যাস একদিকে হাড়ের বৃদ্ধি ঘটায়, অন্যদিকে এইচজিএইচ গ্রোথ হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে উচ্চতা বাড়াতে কাজ করে।

ঘুম: রাত জাগা যাবে না। কারণ, রাতে ঘুমালে শরীরে ওই গ্রোথ হরমোন (এইচজিএইচ) নিঃসৃত হয়। তাই কমপক্ষে রাতে ৮ ঘণ্টা (রাত ১১-৬টা পর্যন্ত) ঘুমাতে হবে।

বসার ধরনের ওপরও উচ্চতা নির্ভর করে। যেমন সারাক্ষণ ঝুঁকে বসে পড়া, কম্পিউটারে কাজ করা ইত্যাদি ধরনের কারণে মেরুদণ্ড বেঁকে শরীরের উচ্চতাকে খাটো করে। তাই সব সময় সোজা হয়ে বসার (প্রয়োজনে পিঠে সাপোর্টার ব্যবহার করে) অভ্যাস করতে হবে। এরপরও যদি উচ্চতা না বাড়তে থাকে, তবে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শমতো সুষম ডায়েট চার্ট তৈরি করে নিতে পারো। প্রয়োজনে পরিপূরক খাবারও খেতে হতে পারে, যা পুষ্টিবিদ ঠিক করে দেবেন। তবে মনে রাখবে, উচ্চতা হঠাৎ করে বাড়বে না। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। তাই ধৈর্য রাখতে হবে।

সূত্র : প্রথম আলো

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments