মেয়াদ শেষ হওয়া খাবার খাওয়া কতটা নিরাপদ

যেকোনো প্যাকেটজাত খাবারের গায়ে লেখা মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তির শেষ নেই। তারিখ ফুরিয়ে গেলেই কিনে রাখা খাবার অখাদ্য মনে করে ফেলে দেন অনেকে। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ হলেই কি খাবার ফেলে দেওয়া উচিত?

অদ্ভুত হলেও সত্য যে যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই শিশুখাদ্য বাদে অন্য কোনো খাদ্যের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখের নেই কোনো নির্ধারিত জাতীয় মানদণ্ড! বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক আইনের অভাবে খাদ্য উৎপাদনকারীরা যা ইচ্ছা তা-ই করছে। নিজেদের সুবিধামতো পণ্যের ওপর বসিয়ে দিচ্ছে দিন-তারিখ। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্যবর্জ্য বিরোধী অলাভজনক সংস্থা রিফেডের নির্বাহী পরিচালক ডানা গুন্ডারস বলেন, উৎপাদনকারী ও ভোক্তা—দুই দলের মধ্যেই অনেক বিভ্রান্তি আছে।

রিফেডের তথ্যমতে, প্রতিবছর আনুমানিক ৮০ মিলিয়ন টন ভালো খাবার নষ্ট করা হয় এবং এর ভয়াবহ প্রভাব পড়ে পরিবেশের ওপর। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন–সম্পর্কিত আন্তসরকারের ভাষ্যমতে, বিশ্বব্যাপী যে গ্রিনহাউস গ্যাস দূষণ হয়, তার ৮-১০ শতাংশ আসে খাদ্যবর্জ্য থেকে।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদের ‘ফুড ল অ্যান্ড পলিসি ক্লিনিক’ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যাপক এমিলি ব্রড লিব বলেন, পৃথিবীর কার্বন নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে খাদ্যবর্জ্য কমানো।

খাদ্য অপচয়ের দায় পৃথিবীর সব মানুষের ওপর বর্তায়। তাই মেয়াদোত্তীর্ণ হলেই খাবার ফেলে না দিয়ে জেনে রাখুন কখন, কীভাবে সেসবের সদ্ব্যবহার করতে হবে।

মেয়াদোত্তীর্ণ হলেই কি খাবার ফেলে দিতে হবে?

খুব কম খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানই আছে, যারা খাবারে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ পরিমাপ করে দেখে। অর্থাৎ বেশির ভাগই খাবারের গায়ে মেয়াদের তারিখ বসিয়ে দেয় স্রেফ অনুমানে। এমনটাই দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাকৃতিক সম্পদ প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ আন্দ্রেয়া কলিন্স।

বেশির ভাগ খাবারের গায়ে যে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ থাকে, তা মোটেও খাবারটা নষ্ট হওয়ার তারিখ নয়, বরং খাবারটা কত দিন সতেজ থাকবে, সেটাই জানিয়ে দেয়। অর্থাৎ কোন তারিখের মধ্যে খাবারটি খেয়ে ফেললে বা ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো হয়, তা-ই উল্লেখ থাকে। লিখে রাখা তারিখের পর খাবারটির স্বাদ কমে গেলেও তা খাওয়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর নয়। কিন্তু এটা না বুঝে আমরা অনেকেই মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেখে ফেলে দিই গুণে-মানে উৎকৃষ্ট সব খাবার!

নিজের ঘ্রাণশক্তি কাজে লাগান

আগেকার দিনে কোনো খাবারের গায়েই মেয়াদের তারিখ লেখা থাকত না। তারপরও কোনটা খাওয়া যাবে, আর কোনটা যাবে না, তা বুঝতে আমাদের নানি-দাদিদের কোনো সমস্যা হতো না। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো খাবার খাওয়া ঠিক হবে কি না, তা বুঝতে আমাদের ইন্দ্রিয় কাজে লাগানো সবচেয়ে ভালো। তাই খাবারের গায়ে লেখা মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বিশ্বাস না করতে পারলে কাজে লাগান নিজের ঘ্রাণেন্দ্রিয়। শুঁকে দেখুন, বাসি গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে কি না। পাওয়া না গেলে সে খাবার গ্রহণযোগ্য।

তবে কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকর হলেও গন্ধহীন। ফলে শুঁকে সেগুলোকে চিহ্নিত করা যায় না। কখনো কখনো জীবাণুগুলো হিমায়িত অবস্থায়ও বেঁচে থাকতে পারে, যা শিশু, গর্ভবতী ও বয়সী ব্যক্তিদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। তাই জমিয়ে রাখা খাবার, বিশেষ করে অনেক দিন ধরে ফ্রিজে রাখা মাংস খাওয়ার আগে দ্বিতীয়বার ভাবা উচিত।

মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ঘনিয়ে আসছে এমন খাবার ফ্রিজে রেখে দিলে তা আরও বেশ কদিন ভালো থাকে

মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ঘনিয়ে আসছে এমন খাবার ফ্রিজে রেখে দিলে তা আরও বেশ কদিন ভালো থাকে ছবি: পেক্সেলস

তাপে ও ঠান্ডায়—দুভাবেই ভালো থাকবে খাবার

তাপ জীবাণু ধ্বংস করে। কোনো মেয়াদোত্তীর্ণ প্যাকেটজাত খাবার চুলার তাপে গরম কিংবা রান্না করে ফেললে সেটায় জীবাণু থাকলেও মরে যায়। ফলে খাবারটি আপনি নিশ্চিন্তে খেতে পারবেন। আবার মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ঘনিয়ে আসছে এমন খাবার ফ্রিজের ঠান্ডায় রেখে দিলে তা আরও বেশ কদিন ভালো ও গ্রহণযোগ্য থাকে।

তথ্যসূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট,

সূত্র : প্রথম আলো

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments