মানুষের রোগ কেন হয়? চলছে গবেষণা

মানুষের রোগ হয় কেন, আর কী করেই বা তা ঠেকানো যেতে পারে – তা জানতে হাজার হাজার মানবদেহ ও মস্তিষ্কের ওপর এক নতুন ধরনের গবেষণা চলছে যুক্তরাজ্যে।

এ গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন ৬০,০০০ মানুষ – যাদের দেহ ও মস্তিষ্ক স্ক্যান করে আরো ভালোভাবে জানার চেষ্টা করা হবে যে মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাতে কী পরিবর্তন হয়।

এর ফলে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, ডেমেনশিয়া বা স্মৃতি লোপ পাবার মত রোগগুলোকে কীভাবে আগেভাগেই চিহ্নিত করা যায় এবং তা রোধ বা চিকিৎসা করা যায় – তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

এ গবেষণার ফলে ইতোমধ্যেই একটি জেনেটিক পরীক্ষা উদ্ভাবিত হয়েছে – যা দিয়ে কোন মানুষ যদি হৃদরোগের বর্ধিত ঝুঁকি নিয়ে জন্মান তা শনাক্ত করা যেতে পারে।

বিবিসির সংবাদদাতা ফার্গাস ওয়ালশ নিজেই এ গবেষণায় অংশ নিয়েছেন । নয় বছর আগে তাকে প্রথমবার স্ক্যান করা হয়েছিল এবং এবার দ্বিতীয়বারের মতো তার মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড,চোখ এবং হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষা করা হবে।

এতে অংশ নেয়া সকল স্বেচ্ছাসেবীর উপাত্ত যুক্তরাজ্যের একটি বায়োব্যাংকে সংরক্ষিত হচ্ছে এবং ৯০টিরও বেশি দেশের গবেষকরা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণায় এই তথ্যভান্ডার ব্যবহার করছেন।

ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হলে মস্তিষ্কের অনেক টিস্যু নষ্ট হয়ে যায়
ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হলে মস্তিষ্কের অনেক টিস্যু নষ্ট হয়ে যায়

কী পরীক্ষা করা হয়?

এতে একজন মানুষের দু’দফায় কয়েক বছরের ব্যবধানে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এমআরআই করা হয়, অর্থাৎ শব্দ তরঙ্গ দিয়ে তার দেহের বিভিন্ন অংশের স্ক্যান করা হয়।

এতে ডেমেনশিয়া, ক্যান্সার ও হৃদরোগের মত রোগগুলোকে চিহ্নিত ও প্রতিরোধ করার নতুন নতুন পথের সন্ধান পাওয়া যায়।

“আমাদের যতই বয়স বাড়ছে, তার সাথে সাথে আমাদের প্রত্যঙ্গগুলোতে কী পরিবর্তন হচ্ছে – তা দেখতে পারবেন গবেষকরা। এর ফলে রোগের লক্ষণ দেখা দেবার, বা সাধারণ ডাক্তারি পরীক্ষায় তা চিহ্নিত হবার অনেক বছর আগেই একেকটি রোগের চিহ্নগুলো শনাক্ত করতে তা সহায়ক হবে,” বলছেন অধ্যাপক নাওমি অ্যালেন, এ প্রকল্পের প্রধান বিজ্ঞানী।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ গবেষণা থেকে আরো নানা তথ্য জানা যেতে পারে।

বায়োব্যাংকের কর্মকর্তা এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক পল ম্যাথুজ বলছেন, কোন কোন লোকের মধ্যে কেন অন্যদের চেয়ে কিছু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে, বা একটা বিশেষ চিকিৎসা কোন রোগীর দেহে সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করবে এসব বিষয়ে জানা সম্ভব হবে ।

রোগ কেন হয় তা জানতে ৬০,০০০ মানুষের দেহ ও মস্তিষ্ক স্ক্যান করা হবে
রোগ কেন হয় তা জানতে ৬০,০০০ মানুষের দেহ ও মস্তিষ্ক স্ক্যান করা হবে

কীভাবে এ গবেষণা চালানো হচ্ছে

ইউকে বায়োব্যাংক প্রথম চালু হয় ২০০৬ সালে। প্রথমে এতে ৫ লক্ষ মানুষের জিনোম বা সম্পূর্ণ ডিএনএ সিকোয়েন্স, স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য এবং জেনেটিক নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয়।

ইমেজিং বা স্ক্যানিংএর কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে। এখানে অংশগ্রহণকারীদের সবাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য সেবার কথা ভেবেই এ গবেষণায় অংশ নিয়েছেন।

এই বায়োব্যাংকের তথ্য ব্যবহার করে গবেষকরা কোন ব্যক্তির করোনারি হৃদরোগ হবার ঝুঁকি বেশি কিনা তা বের করার একটি জেনেটিক টেস্ট উদ্ভাবন করেছেন ।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments