বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ বলছে মো. শাকিল আহম্মেদ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছেন। এই ব্যক্তি এক হাজার ৫০০টি ছিনতাই করেছে বলে পুলিশ দাবি করছে।
পুলিশ বলছে শাকিল আহম্মেদসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে তারা।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন এই ছিনতাইকারী চক্রের মূল টার্গেট ছিল নারীরা।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকার মধ্যে এলাকাভিত্তিক হিসেবে ছিনতাই বেশি হয় বাড্ডা, ভাটারা, মিরপুর ও পল্লবী এলাকায়।
শাহবাগ, মগবাজার, রমনা, মালিবাগ রেলগেট, চানখাঁরপুল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকা, গুলিস্তান, ধানমন্ডি, জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড, নিউমার্কেট, পান্থপথ মোড় ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায়ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
এসব ছিনতাইকারীদের হাতে অনেক সময় অস্ত্র থাকে। অনেক সময় ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে প্রানহানীর ঘটনা ঘটে।
ছিনতাই ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর সেটা তারা একাধিকবার গণমাধ্যমকে বলেছে কিন্তু তার পরেও নির্মূল করা যায়নি এই অপরাধ।
সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন যারা চুরি এবং ছিনতাই এর মত কাজ করে তাদের কাছে এটা একটা নেশা এবং পেশা।
কারণ এদিকের বেশিরভাগ মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে। ফলে কোনটা অপরাধ আর কোনটা অপরাধ না সেটা তারা পার্থক্য করতে পারেন না।
আবার ছিনতাইকারীদের উপরে প্রভাবশালী একটা মহল থাকে বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানী এবং অপরাধ বিশ্লেষকরা।
সমাজবিজ্ঞানী সামিনা লুৎফা বলেন, “নেশাদ্রব্য কেনার জন্য তারা ছিনতাই করে। দিনে ঘুমায়। সন্ধ্যার পর তারা ছিনতাইয়ের জন্য বের হয়। তারা নেশার দ্রব্য কেনার জন্য তারা এটাকেই পেশা করে নেয়। আস্তে আস্তে তারা আরো বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ে”।

রাস্তায় বের হলে কোন কোন দিক খেয়াল রাখতে হবে
ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া এড়াতে কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ফারজানা রহমান খন্দকার।
তিনি মনে করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করলেও ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে।
১. হেল্পলাইনগুলো জানা থাকা
ফারজানা রহমান খন্দকার বলেন, সচেতন নাগরিক হিসেবে পুলিশের হেল্পলাইনগুলো সবার জানা দরকার। তিনি বলেন “এই নম্বর গুলো মোবাইলে ডায়াল লিস্টে রাখা উচিত।
যদি আপনার সঙ্গে কোন ঘটনায় ঘটে যায় তাহলে দ্রুত যাতে পুলিশকে জানাতে পারেন।
এক্ষেত্রে পুলিশ ঘটনাস্থলে দ্রুত চলে আসতে পারবে। আরো কোন দুর্ঘটনা হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সেটাও থামানো সম্ভব”।
২. অনিরাপদ স্থান এড়িয়ে চলা
যেসব এলাকা আপনি জানেন যে অনিরাপদ সেসব পথ এড়িয়ে চলা যেতে পারে।
সন্ধ্যার পর অন্ধকার রাস্তা দিয়ে না গিয়ে আলো আছে এবং মানুষের চলাচল আছে এমন রাস্তা ব্যবহার করবেন।
“পরিবেশটা খেয়াল করবেন। কোন অস্বাভাবিক কিছু নজরে পরলে বা আঁচ করতে পারলে সে রাস্তা দিয়ে না যেয়ে অন্য রাস্তা ব্যবহার করুন। যদি তাতে একটু সময় বেশি লাগে সেটা লাগুক কিন্তু জীবনের নিরাপত্তা সবার আগে” বলেন ফারজানা খন্দকার।

৩. যেসব এলাকায় যাবে সে এলাকা সম্পর্কে জ্ঞান রাখা
আপনি যতি অপরিচিত কোন এলাকায় যেতে চান তার আগেই ঐ এলাকা সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ-খবর নিয়ে নিন।
সেখানে আমার পরিচিত কেউ থাকলে আগে থেকেই তাকে জানান আপনার সেখানে যাওয়ার বিষয়টা।
এতে করে আপনি একজনকে সঙ্গী হিসেবে পেতে পারেন।
আর যদি নিরাপত্তার ইস্যু থাকে তাহলে সেটা আপনি আগেই জেনে যেতে পারছেন।
তাই কোন রাস্তায়, কোন পরিবহণ ব্যবহার করবেন সেটা আপনি আগে থেকেই ঠিক করে ফেলতে পারেন।
৪. সেলফ ডিফেন্স বা আত্মরক্ষার মূল কৌশলটা জানা উচিত
সবার সেলফ ডিফেন্স বা আত্মরক্ষার মূল কৌশলটা জানা উচিত বলে মনে করেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।
অনেক দেশে স্কুল পর্যায়ে আত্মরক্ষার বিভিন্ন কৌশল শিখানো হয়।
সেটা বাংলাদেশে যদি করা হয় তাহলে এই ধরণের পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে না গিয়ে কি করতে হবে সেটা করা সম্ভব।
অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, ফলে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে হয়ত ঐ বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যেত কিন্তু সেটা হয়ে উঠে না।
পুলিশের সহায়তা নিতে হবে কিভাবে তাৎক্ষণিকভাবে
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, ছিনতাই এর ঘটনা হলেই পুলিশের কাছে রির্পোট করতে হবে।
কারণ একটা অপরাধমূলক ঘটনা ঘটলে সেটা যদি পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা না হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর কাছে এর কোন রেকর্ড থাকে না।
“অনেকেই আছে মনে করেন ছিনতাই হয়ে গেছে এখন আর কি হবে কিন্তু যদি আপনার তেমন মূল্যবান কিছু না হারায় তার পরেও আপনি একজন নাগরিক হিসেবে কর্তব্য পুলিশের কাছে জানানো যে কোন এলাকায় ঘটনা ঘটেছে। তাহলে পুলিশ সে অনুযায়ী পরে ব্যবস্থা নিতে পারে”।
তিনি বলেন, ছিনতাই প্রতিরোধে তারা সব সময় সজাগ আছেন এবং তাদের রাতের বেলা যে টহল সেটাও বাড়ানো হয়েছে।