তালেবান ২০২১ সালের ১৫ই আগস্ট আফগানিস্তানে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে যত ধরনের বিধিনিষেধ জারি করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি করেছে নারীদের বিষয়ে।
সামগ্রিকভাবে চারটি ক্ষেত্রে মেয়েদের গতিবিধি, ভূমিকা ছেঁটে ফেলার চেষ্টা করছে তালেবান: রাজনীতি থেকে মেয়েদের সরিয়ে দেওয়া, জনসমক্ষে তাদের চলাফেরা কমিয়ে ফেলা, শিক্ষা নিষিদ্ধ করা এবং কাজের সুযোগ সীমিত করে ফেলা।
ক্ষমতা নেওয়ার পরপর তারা মুখে মেয়েদের ব্যাপারে আগেরবারের চেয়ে নমনীয়তার অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও, কাজের বেলায় তা রাখেনি।
পুরুষদের মন্ত্রীসভা (অগাস্ট ২০২১)
২০০১ সালে তালেবানের প্রথম সরকার উৎখাত হওয়ার পর গত দুই দশকে হামিদ কারজাই এবং পরে আশরাফ গনি সরকার রাজনীতিতে নারীদের ভূমিকা বাড়ানোর নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।
নারীরা সংসদে ঢুকেছে। মন্ত্রীসভায় জায়গা পেয়েছে। তাদের রাষ্ট্রদূত করে পাঠানো হয়েছে। পরে এমনকি রাজ্যের গভর্নর এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে নারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
২০২১ সালের অগাস্টে তালেবানের ক্ষমতা নেওয়ার পর বাকি বিশ্ব উদ্বেগের সাথে দৃষ্টি রেখেছিল এবারের তালেবান আগের বারের চেয়ে আলাদা হবে কি না। তারা বদলেছে কি না।
৩০শে অগাস্ট সর্বশেষ আমেরিকান সৈন্যদের দলটি কাবুল বিমানবন্দর ছেড়ে যাওয়ার পরদিন কাতারে তালেবানের রাজনৈতিক অফিসের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টানিকজাই বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “কোনও সন্দেহ নেই সরকারে নারীদের ভূমিকা থাকবে, কিন্তু আমি বলতে পারবো না তাদেরকে কোনো ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগ করা হবে কি না।”
কিন্তু এক সপ্তাহ পর তালেবান যে মন্ত্রীসভা গঠন করে, তাতে একজন নারীও ছিল না।
নারীদের জীবনযাপনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপে এ সময়ে ২০টিরও বেশি লিখিত এবং মৌখিক নির্দেশ নির্দেশ জারি করা হয়েছে। এর বাদেও, খেয়াল খুশিমতো বিচ্ছিন্নভাবে এমন বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে।
বিক্ষোভ (সেপ্টেম্বর ২০২১)
তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই আফগান নারীরা তাদের ওপর একে একে চাপানো বিধিনিষেধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করে।
অনেক বিক্ষোভে নারীদের মারধর করা হয়। অনেককে কারাগারে অনেকদিন আটকে রাখা হয়। ২০২১ সালে ৭ই সেপ্টেম্বর হেরাতে নারীদের এমন এক বিক্ষোভে তালেবান গুলি চালালে তিনজন মারা যায়, আহত হয় আরও সাতজন।
পরের দিনই তালেবানের স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে এক নির্দেশ জারি করে বিক্ষোভের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। বলা হয়, যে কোনও বিক্ষোভের জন্য আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে।
কিন্তু সেদিনই কাবুলে অনেক নারী বিক্ষোভ করে। তালেবানের নিরাপত্তা বাহিনী লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এমন ঘটনা আরও অনেকবার, অনেক জায়গায় ঘটেছে।
সরকারি কর্মচারী (অগাস্ট/সেপ্টেম্বর ২০২১)
ক্ষমতা নেওয়ার এক মাসের মধ্যে তালেবান সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত নারীদের অফিসে না এসে ঘরে বসে থাকার নির্দেশ দেয়।
সে বছর ১৯শে সেপ্টেম্বর, কাবুল পৌরসভার নারী কর্মচারীদের বলা হয় শুধু তারাই অফিসে আসতে পারবে যাদের কাজগুলো কোনও পুরুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়।
এখন প্রায় সব সরকারি অফিসে এবং মন্ত্রণালয়ের নারী কর্মীরা ঘরে বসে রয়েছেন। শুধু মাসে একদিনে অফিসে গিয়ে বেতন তুলে আনেন তারা।
২০২২ সালের জুন মাস আফগান সিভিল সার্ভিসের নারী কর্মকর্তারা তাদেরকে কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতি দিতে তালেবানের প্রতি আহ্বান জানান।
কিন্তু তার একমাস পর আফগান অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তাদের নারী কর্মীদের বলা হয়, তাদেরকে বাড়িতে থাকতে হবে, এবং বড়জোর পরিবারের কোনও পুরুষ সদস্য অফিসে গিয়ে তাদের জায়গায় কাজ করতে পারবে।
শুধু সরকারি কর্মচারীরাই নয়, আফগান সেনাবাহিনী এবং পুলিশে কর্মরত নারী সদস্যরাও চাকরি হারায়। এমনকি নারী বিচারকদেরও চাকরি চলে যায়।
সঙ্গীত (আগস্ট/সেপ্টেম্বর ২০২১)
তালেবান যে কোনও সঙ্গীতের ঘোর বিরোধী। ফলে তাদের ক্ষমতা নেওয়ার পরপরই আফগান জাতীয় সঙ্গীত ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। প্রতিষ্ঠানটিতে এখন তালা ঝুলছে।
আফগানিস্তানের প্রথম এবং একমাত্র নারী সঙ্গীত গোষ্ঠী জোহরা অর্কেস্ট্রার সদস্যরা পালিয়ে পর্তুগাল গিয়ে আশ্রয় নেয়।
ক্রীড়া (সেপ্টেম্বর ২০২১)
তালেবান নতুন করে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে আফগান নারীরা কোনও ধরনের খেলাধুলায় অংশ নিতে পারেনি, কারণ নারীদের খেলাধুলার ওপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
২০২১ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর তালেবান সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপমন্ত্রী আহমাদুল্লাহ ওয়াসিক বলেন, খেলাধুলায় মেয়েদের অংশগ্রহণ শুধু “ অনুচিতই নয়, একইসাথে অপ্রয়োজনীয়” । কারণ, তার মতে, খেলাধুলো করতে গিয়ে মেয়েদের পক্ষে শরীর এবং মুখ ঢেকে রাখা সম্ভব নয়, ফলে তা শারিয়া বিরোধী।”
তালেবান মন্ত্রী বলেন, মেয়েদের তখনই খেলতে অনুমতি দেওয়া হবে যখন তাদের জন্য “নিরাপদ” একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে। কিন্তু ১৭ মাস পরও আফগান নারীরা দেশে বা বিদেশে কোনও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারছে না।
২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি আফগানিস্তানকে সাবধান করে দেয় নারী অ্যাথলেটদের খেলার অনুমতি না দিলে সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি।
ছাত্র ও ছাত্রীদের আলাদা করে দেওয়া (সেপ্টেম্বর ২০২১)
ক্ষমতা নেওয়ার এক মাসের মধ্যে তালেবান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের পৃথক শিক্ষাদানের নির্দেশ দেয়।
২০২১ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর তালেবানের উচ্চশিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিবিসিকে বলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একই নীতি অনুসরণ করা হবে।
প্রথম দিকে ক্লাসরুমে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের দুই পাশে বসিয়ে মাঝখানে পর্দা ঝুলিয়ে দেওয় হয়। পরে শ্রেণীকক্ষ আলাদা করে দেয়া হয়। এরপর নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা আালাদা দিন ধার্য করে দেওয়া হয়।
নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় (সেপ্টেম্বর ২০২১)
রাজনীতি থেকে নারীদের দূর করতে তালেবান নারী বিষয়ক মস্ত্রণালয় বিলুপ্ত করে। প্রথম দিকে তালেবান কর্মকর্তারা বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে এই বিলুপ্তির কথা অস্বীকার করেন। কিন্তু কদিন পর ১৭ই সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের নাম বদলে দেয়া হয়।
ঐ ভবনে এখন নতুন তৈরি নৈতিকতা প্রচার এবং অনৈতিকতা রোধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অফিস।
মাধ্যমিক স্কুল (সেপ্টেম্বর ২০২১)
২০২১ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুধু পুরুষ শিক্ষক এবং ছাত্রদের স্কুলে ফিরতে বলা হয়। কিন্তু নারীদের মাধ্যমিক স্কুলের (৭ম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী) ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।
ধারণা করা হচ্ছিল নতুন বছর থেকে মেয়েদের স্কুলগুলো খুলবে। তালেবানের কিছু কর্মকর্তাও তেমন ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন।
২০২২ সালের ২৩শে মার্চ নতুন শিক্ষা বছর শুরু হলে অনেক মেয়ে স্কুলে গিয়ে হাজির হয়। কিন্তু তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অনেক মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে ফিরে আসে।
তালেবানের প্রতিশ্রুতি স্বত্বেও ২৯শে জানুয়ারি ২০২৩ সাল পর্যন্তও মেয়েরা স্কুলে ফিরতে পারেনি। শুধু দেশের কিছু জায়গায় গত ডিসেম্বরে দ্বাদশ শ্রেণীর মেয়েদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
টিভি এবং অভিনয় (নভেম্বর ২০২১)
২০২১ সালের নভেম্বরে টিভি নাটকে নারীদের অভিনয় নিষিদ্ধ করা হয়। নারী সাংবাদিক এবং উপস্থাপকদের ক্যামেরার সামনে মাথায় হিজাব পরার নির্দেশ দেওয়া হয়।
নিরাপত্তার ভয়ে অনেক নারী মিডিয়া কর্মী কাজ ছেড়ে দেন। অনেকে বিদেশে পালিয়ে যান।
এমনকি যেসব নারী নাটকে কণ্ঠ দিতেন তাদেরও ওপর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়।
২০০১ সাল থেকে আফগানিস্তানে বিদেশি বিভিন্ন সিরিয়াল স্থানীয় ভাষায় ডাবিং করে প্রচার করা হচ্ছিল। শত শত নারী এগুলোতে নিয়মিত কণ্ঠ দিতেন। এসব বিদেশী সিরিয়াল তালেবান নিষিদ্ধ করে দেয়। ফলে চাকরি হারান শত শত নারী।
ভ্রমণ (ডিসেম্বর ২০২১)
তালেবান ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নারীদের যাতায়াত এবং ভ্রমণের ওপর বিধিনিষেধ জারি করে।
নৈতিকতা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা হয় যেখানে ট্যাক্সি ড্রাইভারদের বলা হয় হিজাববিহীন নারীদের যেন তারা যাত্রী হিসাবে না ওঠায়। তাছাড়া, পুরুষ সঙ্গী (বাবা, পুত্র, স্বামী বা ভাই) না থাকলে কোনও নারী ৪৫ মাইলের বেশি দূরে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়।
২৭শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ এ তালেবান পুরুষ সঙ্গী ছাড়া নারীদের বিদেশভ্রমণ নিষিদ্ধ করে।
গৃহে নির্যাতন এবং আশ্রয় (আগস্ট-ডিসেম্বর ২০২১)
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাবুল ছাড়াও অন্য কিছু জায়গায় নারীদের জন্য আমান নামে কিছু নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল যাতে গৃহে নির্যাতন থেকে পালিয়ে তারা নিরাপদে থাকতে পারে।
তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর এসব আশ্রয় কেন্দ্র থেকে অনেক নারী পালিয়ে যায়। এগুলোর এখন কোনও অস্তিত্ব নেই।
হিজাব (মে ২০২২)
তালেবান কাবুলে প্রবেশের কদিনের মধ্যে শহরের রাস্তার চেহারা পাল্টে যায়। বিউটি পার্লার এবং দেয়ালের বিজ্ঞাপনে মেয়েদের সমস্ত ছবির ওপর রং দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।
সেসবের বদলে দেয়ালে দেয়ালে লেখা হতে থাকে তালেবানের বিভিন্ন স্লোগান । সেগুলোর অন্যতম ছিল নারীদের হিজাব পরার নির্দেশ।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে নারীদের হিজাব পরা নিশ্চিত করতে প্রচারণা শুরু করে তালেবান। রাস্তায় রাস্তায় এ ব্যাপারে বিলবোর্ড টাঙানো হয়।
কয়েক মাস পর ৭ই মে, তালেবান নারীদের জন্য ড্রেস কোড ঘোষণা করে। বলা হয় জনসমক্ষে সব নারীকে মুখ ঢেকে রাখতে হবে। না মানলে ঐ নারীর পুরুষ অভিভাবকদের শাস্তি পেতে হবে।
ড্রাইভিং (মে ২০২২)
ঐ একই মাসে হেরাতে ড্রাইভিং স্কুলগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয় তারা যেন আর নারী শিক্ষার্থী না নেয়। তালেবান এমন নির্দেশ দেওয়ার কথা অস্বীকার করে, তবে হেরাত ও কাবুলের অনেক নারী বিবিসির কাছে নিশ্চিত করেছেন তারা ড্রাইভিং ক্লাস করতে পারছেন না। যারা শিখেছেন তাদের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না।
তালেবানের একজন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন কেন্দ্রীয় সরকার নতুন করে নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে
বিদেশী ভাষা এবং ধর্ম শিক্ষা (সেপ্টেম্বর ২০২২)
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাবুল এবং অন্যান্য প্রদেশে বিদেশী ভাষা শিক্ষার কিছু প্রতিষ্ঠান বিবিসিকে জানায় তালেবান এগুলো একরকম জোর করে বন্ধ করে দিয়েছে। শর্ত দেওয়া হয়েছে নারী এবং পুরুষ শিক্ষার্থীদের পৃথক ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে, এবং নারীদের জন্য শুধু নারী প্রশিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
অনেক পরিবার অভিযোগ করেছে অনেক মসজিদ ধর্ম শিক্ষার ক্লাস থেকে মেয়েদের বাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছে।
অ্যাকাডেমিক শিক্ষা (অক্টোবর ২০২২)
২০২২ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে আফগানিস্তানের ৩৩টি প্রদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। এবং এই প্রথম সেদেশে কিছু কিছু বিষয়ে মেয়েদের ভর্তি পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি।
বেশ কিছু প্রদেশে কৃষি, পশু চিকিৎসা, নির্মাণ প্রকৌশল এবং খনিজ সম্পদ আহরণের মত বিষয়ে মেয়েদের আবেদন করতে দেওয়া হয়নি।
যদিও তালেবান সরকার তা অস্বীকার করেছে কিন্তু অনেক নারী শিক্ষার্থী বিবিসির কাছে নিশ্চিত করেছেন তাদের পছন্দ সীমিত করে দেওয়া হয়েছে।
দুই সপ্তাহ পরই তালেবান কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নোটিস টাঙ্গিয়ে বলে দেয় কৃষি, ব্যবসা, কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল বিভাগসহ বেশ কিছু বিষয়ে নারীরা মাস্টার্স ডিগ্রি করতে পারবে না ।
গ্রাজুয়েশন (ডিসেম্বর ২০২২)
গত মাসে অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আফগান সোশ্যাল মিডিয়াতে গ্রাজুয়েশন উদযাপনের বহু ছবি প্রকাশিত হতে শুরু করে। কিন্তু সেখানে শুধুই পুরুষ ছাত্রদের ছবি। শুধু তাদেরই মাথার হ্যাট খুলে আকাশে ছুড়ে আনন্দ-উল্লাস করতে দেখা যায়। নারীদের সেখানে চোখেই পড়েনি।
অনেক নারী বিবিসিকে বলেছেন, ক্যাম্পাসের বাইরে এমন গ্রাজুয়েশন উৎসবে তাদের যোগ দিতে মানা করা হয়। অমান্য করা হলে তাদের সার্টিফিকেট না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
মেয়ে গ্রাজুয়েটদের কোনও অনুষ্ঠানে পুরুষ শিক্ষক বা ছাত্রীদের পুরুষ অভিভাবকদের যোগদান নিষেধ করা হয়। অমান্য করা হলে শিক্ষকদের বরখাস্তের হুমকি দেওয়া হয়।
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের কাছে পাঠানো এসব নির্দেশনা সম্বলিত নোটিস বিবিসি দেখেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় (ডিসেম্বর ২০২২)
২০২২ সালের ২১শে ডিসেম্বর তালেবানের উচ্চশিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয় নারীদের উচ্চশিক্ষা বন্ধ করে দেয়। সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে “পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত” মেয়েদের ভর্তি নিষিদ্ধ করা হয়।
মন্ত্রী নেদা মহম্মদ সাদিম বলেন “শারিয়া আইন প্রবর্তন” করতে এবং “অনৈতিকতা আটকাতে” তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এনজিও (ডিসেম্বর ২০২২)
২০২২ সালের ২৪শে ডিসেম্বর তালেবান সরকার সমস্ত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি সাহায্য সংস্থা বা এনজিওতে নারীদের নিয়োগ নিষিদ্ধ করে।
সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এক চিঠিতে এসব প্রতিষ্ঠানকে বলা হয় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তারা যেন তাদের নারী কর্মীদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে।
তালেবানের যুক্তি ছিল এসব প্রতিষ্ঠানে হিজাবসহ ইসলামের অন্যান্য বিধি-নিষেধ অনুসরণ করা হচ্ছে না।