আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করিয়া দেশের সরকারপ্রধান ও তাহার দলকে ক্ষমতাচু্যত করিবার ষড়যন্ত্র করা হইতেছে বলিয়া অভিযোগ উঠিয়াছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচনের পূর্বে দেশের প্রধান নির্বাহীকে ক্ষমতা হইতে সরাইয়া দিতে একটি মহল উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছে। এই ধরনের ষড়যন্ত্রের কথা ইহার পূর্বেও বলা হইয়াছে একাধিক বার। এমনকি সরকারপ্রধানের পিছু একটি বুলেট তাড়া করিতেছে, বলা হইয়াছে এমন আশঙ্কার কথাও। এবারও শোকাবহ ১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ করিয়া অতীতের মতো আবারও বিস্ময় প্রকাশ করা হইয়াছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নজিরবিহীন ও নৃশংস রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাহার পরিবারের সদস্যগণ। ইহার সহিত আজও তাহাদের অপতত্পরতা রহিয়াছে বলিয়া দাবি করা হইয়াছে।
রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র সকল দেশেই হয় ও এই যাবত্ হইয়া আসিতেছে। ইহার মধ্যেও টিকিয়া থাকিয়া দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করিয়া যাওয়াটাই আসল কথা। ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করিয়া একাধারে তিন মেয়াদে প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করাটা কম গুরুত্বপূর্ণ নহে। উন্নত-অনুন্নত ও উন্নয়নশীল সকল দেশেই সরকারপ্রধানকে কেন্দ্র করিয়া ষড়যন্ত্র করিতে দেখা যায়। আমেরিকার মতো দেশে ষড়যন্ত্র করিয়া ১৯৬৩ সালে ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে হত্যা পর্যন্ত করা হইয়াছে। এমনকি পরবর্তী বত্সর হত্যা করা হইয়াছে তাহার ভাই অ্যাটর্নি জেনারেল ও সিনেটর রবার্ট এফ কেনেডিকেও। ৪০তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান একজন স্কুলছাত্রের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হন। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে মোগল, ব্রিটিশ ও স্বাধীন দেশের কোন আমলে সরকারপ্রধানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয় নাই, তাহা বলাই কঠিন। দেশের সর্বময় ক্ষমতা গ্রহণের জন্য চক্রান্ত করিয়া পিতাকে বন্দি ও আপন ভাইদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবারও দৃষ্টান্ত রহিয়াছে। স্বাধীন ভারতে ১৯৯১ সালে কীভাবে সপ্তম প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে হত্যা করা হইল, তাহাও আমাদের অজানা নহে। আমরা জানি, প্রত্যেক দেশের সরকারকে তথ্য দিয়া সহযোগিতা করেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ইনটেলিজেনস বা গোয়েন্দা সংস্হা। বিশেষ করিয়া, যেই সকল দেশের সহিত সরকারের সম্পর্ক ভালো, সেই সকল দেশের গোয়েন্দা সংস্হাগুলির নিকট হইতে যে কোনো সরকারপ্রধান আগাম তথ্য পান। সেই অনুযায়ী সরকারকে ব্যবস্হা গ্রহণ করিতে দেখা যায়। তবে প্রকাশ্যে জনগণের সম্মুখে এইরূপ অভিযোগ তুলিবার উদ্দেশ্য হইতে পারে এই যে, যাহাতে ষড়যন্ত্রকারীরা মাথা চাড়া দিয়া উঠিতে না পারে। বরং তাহারা চুপ থাকিয়া যায়। কেননা তাহাদের ষড়যন্ত্র এখন আর অজানা নহে। যেহেতু তাহা ধরা পড়িয়া গিয়াছে, তাই পালটা ব্যবস্হা গ্রহণের চেষ্টা চলিবে, ইহাই স্বাভাবিক। তবে প্রকাশ্যে জনগণকে জানানোর উদ্দেশ্য এই যে, যাহাতে জনগণকে সচেতন করা যায়।
শুধু সরকারপ্রধানই নহেন, তৃণমূল পর্যায়সহ যে কোনো রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করা হইতে পারে। তাহাদেরও উত্খাত করিবার জন্য প্রতিপক্ষ চক্রান্ত করিতে পারে। যখন সরকার বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্হার মাধ্যমে তাহা জানিতে পারে, তখন হঠাত্ মন্ত্রী-এমপি ও চেয়ারম্যানদের নিরাপত্তা বাড়াইয়া দেওয়া হয়। তাহারা না চাহিলেও এইরূপ নিরাপত্তাব্যবস্হা জোরদার করা হয়। অনেক সময় দেশ ও জাতির স্বার্থে তাহাদের অগোচরেও নানা সতর্কতামূলক ব্যবস্হা গ্রহণ করা হয়। অতএব, দেশে প্রধান নির্বাহীর বিরুদ্ধে যাহারা ষড়যন্ত্র করিতেছে, তাহাদের বিরুদ্ধে সকল রকমের ব্যবস্হা গ্রহণের জন্য সরকারের বিভিন্ন মেকানিজমের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকিবে বলিয়া আমরা প্রত্যাশা করি।
[…] […]