শিশুকে প্রথম কি ধরনের শক্ত খাবার দিবেন, কীভাবে দিবেন

শিশুর বয়স ছয় মাস পূর্ণ হলে তার ওজন সাধারণত জন্মের সময়ের ওজনের দ্বিগুণ হয়। এ সময় তার দৈনিক খাদ্যশক্তির চাহিদা শুধু মায়ের দুধ থেকে পূরণ করা সম্ভব নয়। তাই তাকে বাড়তি খাবার দিতে হয়, যা সম্পূরক খাদ্য নামে পরিচিত। পাশাপাশি কিছু অনুপুষ্টির বাড়তি চাহিদা যেমন আয়রন, জিংক, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি ইত্যাদি মায়ের দুধের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য থেকে পূরণ করতে হয়।

শুরু করুন চামচ দিয়ে

শিশুকে সম্পূরক খাদ্য খাওয়ানো শুরু করতে হবে চামচ দিয়ে। ফিডার বা বোতলে নয়। এ অভ্যাস করতে শিশুর বয়স ১৮১ দিন পূর্ণ হওয়ার পাঁচ থেকে সাত দিন আগে থেকে মায়ের দুধ চামচে করে মাঝেমধ্যে খাওয়ানো যেতে পারে। ১৮১ দিন থেকে প্রথমে পেস্টের মতো নরম করে ভাত রান্না করে তার সঙ্গে মায়ের দুধ মিশিয়ে অল্প অল্প করে খাওয়ানো শুরু করতে হবে। এভাবে আলুর পেস্ট, সুজি, সাগুদানার সঙ্গে মায়ের দুধ মিশিয়ে খাওয়ান।

প্রথমেই পাকা ফল নয়

প্রথমেই পাকা ফল শিশুকে দেবেন না। শিশু যখন বাড়তি খাবারে অভ্যস্ত হয়ে যাবে, তখন প্রতি বেলায় নরম ভাতের সঙ্গে মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা থেকে যেকোনো একটি খাদ্য নরম বা থেঁতো করে, সঙ্গে ঘন করে রান্না করা ডাল এবং যেকোনো একটি রঙিন শাকসবজি মিলিয়ে খাওয়াতে হবে। ছয় থেকে আট মাস বয়সী শিশুকে দিনে ২৫০ মিলিগ্রাম বাটির এক বাটি খাবার দুই থেকে তিনবারে খাওয়াতে হবে।
৯ থেকে ১১ মাস বয়সীকে দিনে ২৫০ মিলিগ্রাম বাটির দেড় বাটি খাবার তিন থেকে চারবারে খাওয়ান। ১২ থেকে ২৩ মাস বয়সীকে দিনে ২৫০ মিলিগ্রাম বাটির তিন বাটি খাবার তিন থেকে চারবারে খাওয়াতে হবে।

ধরন পাল্টান

এসব খাবার খাওয়ানোর পরও শিশুর ক্ষুধা ও রুচির ওপর ভিত্তি করে দিনে এক থেকে দুবার তেলে ভাজা খাবার, রঙিন ফল ইত্যাদি দিয়ে স্বাস্থ্যকর নাশতা দিতে হবে। শিশু যখন সব ধরনের বাড়তি খাবারের সঙ্গে পরিচিত হয়ে যাবে, তখন একেক দিন একেক ধরনের ও স্বাদের খাবার দিন। এতে শিশুর রুচি ও খাবারের প্রতি আকর্ষণ দুটিই বাড়বে।

প্রথমে লবণ-চিনি নয়

বয়স এক বছর হওয়ার আগে শিশুর খাবারে লবণ, মধু ও চিনি দেবেন না। বাদাম, মুড়ি, ছোলা, বরই, বেদানা ও আঙুরের মতো খাবার শিশুকে দেবেন না। কারণ, শিশুর গলায় বা শ্বাসনালিতে এ জাতীয় খাবার আটকে যেতে পারে।

সঙ্গে নিয়ে বসুন

শিশু সাধারণত আট মাস বয়স থেকে নিজ হাত দিয়ে খাওয়া শেখা শুরু করে। এ সময় শিশুকে আলাদা ছোট থালা, বাটি, গ্লাস ইত্যাদিতে খাবার দিয়ে পরিবারের সঙ্গে নিয়ে খেতে বসুন। শিশুকে প্রতিবেলায় যতটুকু খেতে বলা হয়েছে, সে প্রতিবেলায় ততটুকুই খাবে—এমন না-ও হতে পারে।

মাস শেষে তার বৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে কি না, সেটা দেখাই মূল লক্ষ্য। শিশুকে কখনোই জোর করে খাওয়াবেন না, এতে তার ভেতর খাদ্যভীতি সৃষ্টি হতে পারে। বাড়তি খাবারের পাশাপাশি অবশ্যই শিশুকে ২৪ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে।

মো. নাহিদ নেওয়াজ, পুষ্টিবিদ, ঝিনাইদহ ডায়াবেটিক হাসপাতাল, ঝিনাইদহ

সূত্র : প্রথম আলো

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments