অবশেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে জয়ের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ। পছন্দের ও স্বাচ্ছন্দ্যের ফরম্যাট ওয়ানডেতে ফিরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়ে ঈদের খুশি আরও রাঙিয়ে তুললো তামিম ইকবালের দল। দেশের মানুষের ঈদের আনন্দও বাড়িয়ে দিলো টাইগাররা।
রবিবার (১০ জুলাই) গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছয় উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সহজ জয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি নিজেদের করে নিয়ে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো তামিম ইকবালের দল। এই নিয়ে উইন্ডিজদের বিপক্ষে টানা ৯ ওয়ানডে জিতলো টাইগাররা।
টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে ২-০ ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ।
সংস্করণে একটি ম্যাচ ভেসে যায় বৃষ্টিতে। সফরে একে এমন পারফরম্যান্স, তার উপর নেই সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন ও ইয়াসির আলি চৌধুরি। তবুও যেন এগিয়ে থেকেই ওয়ানডে সিরিজ শুরু করে বাংলাদেশ। এই সংস্করণে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ হারেনি কোনো ম্যাচ
মাঠ ভেজা থাকায় খেলা শুরু হয় সোয়া দুই ঘণ্টা দেরিতে। তবে ম্যাচের লাগাম মুঠোয় নিতে বাংলাদেশ খুব একটা দেরি করেনি। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গড়তে পারেনি একটিও পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি, কোনো ব্যাটসম্যান ছুঁতে পারেননি চল্লিশ। শামার ব্রুকস ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের আর কোনো ব্যাটসম্যান যেতে পারেননি বিশ পর্যন্ত। অনেকটা সময় ক্রিজে থাকা এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান করেন ৩৩। স্বাগতিকরা নিজেদের সেরা জুটি পায় দশম উইকেটে। ৩৪তম ওভারে নবম উইকেট হারানোর পর বাকি সময়টা কাটিয়ে দেন অ্যান্ডারসন ফিলিপ ও জেডেন সিলস। ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশের নিদারুণ ব্যর্থতায় গড়েন ৩৯ রানের জুটি।
আরও পড়ুন :
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে জয় ছাড়া কিছু ভাবছে না বাংলাদেশ
উইকেট বেশ মন্থর। বল গ্রিপ করেছে উইকেটে, ব্যাটে এসেছে ধীরে। বাউন্সও ছিল একটু অসমান। তা কাজে লাগিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। বাঁহাতি পেসার শরিফুল ৩৪ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ওয়ানডেতে এটাই তার সেরা বোলিং। মিরাজ ৩ উইকেট নেন ৩৬ রানে। ঝড় তোলার আগেই তিন বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান কাইল মেয়ার্স, নিকোলাস পুরান ও রভম্যান পাওয়েলকে বিদায় করা এই অফ স্পিনার জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। অভিষেকে কোনো উইকেট না পেলেও বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ৮ ওভারে দেন কেবল ১৬ রান। টি-টোয়েন্টিতে খরুচে বোলিং করা গতিময় পেসার তাসিকন আহমেদের ৮ ওভারে থেকে আসে মোটে ২৫ রান।
বোলারদের নৈপুণ্যে লক্ষ্যটা ছোটই ছিল। তবে ‘জেতা’ ম্যাচ হেরে যাওয়ার নজির তো আর কম নেই বাংলাদেশের। তবে এই ম্যাচে নিজেদের কাজটুকু ভালোভাবেই সারেন ব্যাটসম্যানরা। সাবলীল ব্যাটিংয়ে দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। সফরকারী বোলারের মতো লাইন ও লেংথে এতোটা ধারাবাহিক ছিলেন না ক্যারিবিয়ানরা। রান রেটের তেমন কোনো চাপ না থাকায় তেমন একটা ঝুঁকি নিতে হয়নি তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, মাহমুদউল্লাহদের। বাউন্ডারি বল পান নিয়মিতই। সে কারণেই আম্পায়ার্স কলে লিটন দাসের দ্রুত বিদায়ের পরও বাংলাদেশকে চেপে ধরতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে দলকে এগিয়ে নেন তামিম ও শান্ত।
প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে রান তাড়ায় তৃতীয় ওভারে ভাঙে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি। বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেনের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান লিটন। আবেদনে সাড়া দিতে অনেক সময় নিয়ে আঙুল তোলেন আম্পায়ার জোয়েল উইলসন। রিভিউ নেন লিটন। স্পিন করে বেরিয়ে যাওয়া বল ব্যাটে খেলতে পারেননি, লাগতো লেগ স্টাম্পের বাইরের দিকে। আম্পায়ার্স কলে লিটন ফিরে যাওয়ায় টিকে থাকে রিভিউ। ভীষণ হতাশ দেখায় ডান হাতি এই ওপেনারকে। আম্পায়ারদের কিছু বলতে দেখা যায় তামিমকে।
শুরুতেই উইকেট হারানোয় হয়তো পাল্ট আক্রমণের পথ বেছে নেন তামিম। ক্রিজে গিয়েই দুটি বাউন্ডারি মারেন শান্ত। দ্রুতই জমে যায় তাদের জুটি। ফিলিপকে ছক্কা ও চার মেরে আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠার আভাস দেন তামিম। পরের ওভারেই অহেতুক ঝুঁকিপূর্ণ রান নিতে গিয়ে অধিনায়কের রান আউটে ভাঙে ৩০ বল স্থায়ী ৪০ রানের জুটি। তামিম ২৫ বলে এক ছক্কা ও চারটি চারে করেন ৩৩ রান। যেভাবে শুরু করেছিলেন সেভাবেই চালিয়ে যেতে থাকেন শান্ত। মিডল অর্ডারে বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যানের অনুপস্থিতিতে চারে নেমে দায়িত্ব নিয়ে খেলেন মাহমুদউল্লাহ। শুরুতেই ভাঙতে বসেছিল তাদের জুটি। রিভিউ নিয়ে ব্যক্তিগত ২৫ রানে বাঁচেন শান্ত। অভিষিক্ত বাঁহাতি স্পিনার গুডাকেশ মোটির বলে আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দেওয়ার পর নেন রিভিউ। ইম্প্যাক্ট স্টাম্পের বেশ বাইরে দেখানোর পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গো।
শান্তকে ফিরিয়ে সেই মোটিই ভাঙেন ৭১ বল স্থায়ী ৪৯ রানের জুটি। পুরানের হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের ওয়ানডেতে ফেরার ইনিংস। পাঁচ চারে ৪৬ বলে ৩৭ রান করেন শান্ত। উইকেটে স্পিন ধরছে দেখে আক্রমণে আসেন পুরান নিজেই। নিজের চতুর্থ ওভারে অফ স্পিনে মাহমুদউল্লাহকে বোল্ডও করে দেন তিনি। তবে ক্যারিবিয়ান অধিনায়কের ‘নো’ বলের কল্যাণে বেঁচে যান অভিজ্ঞ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। নিজের পরের ওভারেই আফিফের (১৭ বলে ৯) উইকেট পান পুরান। মিডঅন থেকে পিছন দিকে দৌড়ে গিয়ে চমৎকর ক্যাচ নেন ফিলিপ।
এলবিডব্লিউর রিভিউ নিলে পরের ওভারে মাহমুদউল্লাহর উইকেটও পেতে পারতেন পুরান। স্টাম্পে পিচ করা বল আঘাত হানতো লেগ স্টাম্পে! ‘বেঁচে’ গিয়ে নুরুল হাসান সোহানকে নিয়ে বাকিটা সারেন টি-টোয়েন্টি অধিনায়কই। ৬৯ বলে এক ছক্কা ও দুই চারে ৪১ রান করেন তিনি। তার সঙ্গে ৪০ রানের জুটিতে কিপার-ব্যাটসম্যানের সোহানের অবদান একটি করে ছক্কা ও চারে ২৭ বলে ২০।
আগামী বুধবার সিরিজ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নামবে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪১ ওভারে ১৪৯/৯ (হোপ ০, মেয়ার্স ১০, ব্রুকস ৩৩, কিং ৮, পুরান ১৮, পাওয়েল ৯, শেফার্ড ১৫, আকিল ৩, মোটি ৭, ফিলিপ ১৯*, সিলস ১৬*; নাসুম ৮-৩-১৬-০, মুস্তাফিজ ৮-০-৩৪-১, মিরাজ ৯-২-৩৬-৩, তাসকিন ৮-০-২৬-০, শরিফুল ৮-১-৩৪-৪)।
বাংলাদেশ: ৩১.৫ ওভারে ১৫১/৪ (তামিম ৩৩, লিটন ১, শান্ত ৩৭, মাহমুদউল্লাহ ৪১*, আফিফ ৯, সোহান ২০*; আকিল ৮-০-৪৩-১, সিলস ৩.৫-০-২৬-০, ফিলিপ ২-০-১৫-০, শেফার্ড ২-০-১০-০, মোটি ৯-১-১৮-১, পুরান ৭-০-৩৯-১)
ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে বাংলাদেশ
ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদী হাসান মিরাজ