কোরবানির ঈদে মাংস খাওয়া হয় বেশি, কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া স্বাস্থ্যকর নয়। কতটুকু মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো জানালেন বারডেম হাসপাতালের পুষ্টি বিভাগের সাবেক প্রধান পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার আলো। লিখেছেন মোনালিসা মেহরিন
ঈদ আনন্দে বাড়িতে জম্পেশ খানাপিনার আয়োজন থাকে। বিশেষ করে কোরবানির ঈদে গরুর মাংসের অনেক পদ রান্না করা হয়। এ জন্য মাংস খাওয়া হয় বেশি। কিন্তু মনে রাখতে হবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো খাবার খাওয়া উচিত হয়। সেটি মাংসই হোক কিংবা অন্য যেকোনো খাবার।
কোরবানির সময় আমাদের বাসাবাড়িতে মাংসের আধিক্য দেখা যায়। গরু কোরবানির ফলে বেশি মাংস আসে ঘরে। এই সুযোগে অনেকেই বেশি করে মাংস খান। এটি উচিত নয়। গরুর মাংস বা রেড মিট খাওয়ার আগে নিজের স্বাস্থ্যগত দিক চিন্তা করতে হবে।
বুঝে খান মাংস
মাংস প্রাণিজ আমিষ। গরু, ছাগল, মহিষ, উট, দুম্বা, হাঁস, মুরগি, কবুতর, কোয়েলসহ বিভিন্ন রকম মাংস আছে। একেক মাংসের পুষ্টিমান একেক রকম। গরুর চর্বি ছাড়া লাল মাংসে প্রতি ১০০ গ্রামে ২৭ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। গরুর মাংসের যেমন উপকারিতা আছে, তেমনি বেশি খাওয়ার ঝুঁকিও আছে। আবার রেড মিট বা লাল মাংস মানেই যে তার ক্ষতিকর বিষয়টি তাও নয়। মাংস খাওয়ার অনেক উপকারী দিকও আছে। মাংসের ক্ষতিকর অংশ মূলত চর্বি। খাওয়ার পর এই চর্বি বাসা বাঁধে রক্তে, বেড়ে যায় কোলেস্টেরল। গরুর মাংসে রয়েছে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা রক্তে কোলেস্টেরল ও এলডিএলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এ জন্য যাঁরা হৃদরোগে ভুগছেন, তাঁদের বুঝেশুনে গরুর মাংস খেতে হবে। অনেক বেশি মাংস খাওয়ার কারণে প্রস্টেট, কিডনি ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয়। অতিরিক্ত লাল মাংস খাওয়ার কারণে বাড়তে পারে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের শঙ্কা। যাঁরা অতিরিক্ত ওজন সমস্যায় ভুগছেন, বেশি মাংস খাওয়া তাঁদের জন্য আরো ওজন বাড়াতে পারে। তাই বেশি মাংস পেয়ে বেশি খাওয়া উচিত নয়, বরং একটি ব্যালান্স ডায়েট মেনে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
মাংস খাওয়ার উপকার
প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি গরুর মাংস শরীরের অন্যতম খনিজ উৎস হিসেবে কাজ করে। এতে রয়েছে জিংক, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন ‘বি’ ইত্যাদি। এ সবই দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। চর্বিহীন মাংস খাওয়ার বেশ কিছু সুফল আছে। যেমন—টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে হাড়ে বল দেয়, ওজন ঠিক রাখে, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়, বোধশক্তি বাড়ায় ইত্যাদি। অথচ চর্বির কারণে মাংসের এসব উপকার ব্যাহত হয়। লাল মাংস খাওয়া সম্পর্কে সতর্কবাণীর প্রায় পুরোটাই বয়স্কদের জন্য। তবে যাঁদের বয়স ৩০-এর নিচে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক আছে, মেদাধিক্য নেই এবং ওজনও স্বাভাবিক, তাঁদের জন্য লাল মাংসে অসুবিধা নেই। বেশি পরিমাণ আমিষ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। তাই রাতে ঘুমানোর আগে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে ইসবগুলের সরবত খাওয়া যেতে পারে। এক গ্লাস পানিতে এক টেবিল চামচ ইসবগুল মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পান করুন। মনে রাখুন, ভিজিয়ে রাখলে ইসবগুলের উপকারিতা নষ্ট হয়ে যায়।
আরও পড়ুন :
৪টি খাবার আপনাকে পেটের অসুখ থেকে ভালো রাখবে
৩৭ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ডিজিটাল সনদ-আইডি কার্ড পাচ্ছেন প্রথম ধাপে
কতটুকুই যথেষ্ট
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন মানুষের সপ্তাহে ৩০০ গ্রামের ওপর মাংস খাওয়া উচিত নয়, কিন্তু ঈদে এই বাছবিচার করা সম্ভব হয় না। তার পরও যতটুকু সংযম বজায় রেখে মাংস খাওয়া যায়, তত ভালো।
টিপস
* মাংস রান্নার সময় মাঝারি জ্বালে ঢেকে সময় নিয়ে রান্না করতে হবে। এতে পুষ্টিমান ঠিক থাকে।
* মাংস যাতে ভালোভাবে সিদ্ধ হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
* রান্নার সময় কিছুক্ষণ পর পর মাংস নেড়েচেড়ে দিতে হবে। যাতে সব মাংস ভালোমতো সিদ্ধ হয়।
* মাংস রান্নার আগে খেয়াল করে চর্বি বাদ দিতে হবে।
* মাংসের চর্বি খাওয়া পরিহার করতে হবে।
* মাংস খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার; যেমন—সালাদ ও লেবু খাওয়া ভালো।
* সবজি দিয়ে মাংস রান্না করতে পারেন। কম মাংস খাওয়া হবে।
[…] […]
[…] […]
[…] […]