আপনি কি ডিমেনশিয়া বা ঘনঘন ভুলে যাওয়া রোগে ভুগছেন? জেনে নিন লক্ষণ

প্রতিদিন কত দায়িত্ব আমাদের সামলাতে হয়। সব কিছু একসঙ্গে করতে গিয়ে একটু-আধটু ভুল হতে পারে বা ভুলেও যেতে পারেন একটা কাজ করতে গিয়ে অন্যটা। কিংবা শত ব্যস্ততায় সহজ জিনিসটা মাথা থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। ঘর থেকে তাড়াহুড়ো করে বেরতে গিয়ে পাখা কিংবা লাইট বন্ধ করলেন না, মেট্রো বা ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে দেখলেন নির্দিষ্ট স্টেশনের আগে বা পরে নামছেন, যাবেন ডাউনে অথচ আপ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, কাউকে ফোন করার কথা মনে করে রেখেও ঠিক ভুলে গেলেন, ঘুমন্ত বা জেগে থাকা অবস্থায় গভীর চিন্তায় মগ্ন, তার পর চিন্তা ভাঙলেই চারিদিক যেন অচেনা। এমন নানা রকম ঘটনা ঘটতে পারে। তার মানেই কি আপনি ডিমেনশিয়া অসুখের প্রাথমিক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে? সব ভুলে যাওয়াই কি ডিমেনশিয়ার লক্ষণ?

নিজেকে প্রশ্ন করুন-

১.অনেকদিন পর দেখা হওয়া কোনও বন্ধুর নাম মনে পড়ছে না?
২. সকালে কী খেয়েছেন সন্ধ্যাবেলা ভুলে গিয়েছেন?
৩. কথা বলার সময়ে একই প্রশ্ন বারবার করছেন?
৪. অল্প কিছুক্ষণ আগেই মোবাইল কোথায় রাখছেন সামান্য সময়ের ব্যবধানেই তা ভুলে যাচ্ছেন?
৫. রান্নায় আদৌ লবণ দিয়েছেন কিনা মনে করতে পারছেন না?
৬. চেকের সই মিলছে না?
৭. সহজ সিদ্ধান্ত, খাওয়ার পর হাত ধুবেন, মুখ ধুবেন– এগুলো মাথায় আসছে না?
৮. তারিখ ও সময়ের তালজ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন?
৯. অফিসের কম্পিউটারে প্রতিদিন যে পাসওয়ার্ড দেন সেটাই হঠাৎ করে একবারে গুলিয়ে যাচ্ছে?১০. পেশাগত কাজের চাপে মনের অবসাদ?
১১.নিকটজনের ভাল নাম একবারে মনে আসছে না?
১২. অল্পতেই মেজাজ হারিয়ে কুকথা বলছেন?
১৩. পেটে আসছে মুখে আসছে না! কথায় বলতে গিয়ে বারবার শব্দ হারিয়ে ফেলছেন?
১৪. বাড়ি থেকে বেরনোর সময় দরকারি পাঁচটা জিনিসের মধ্যে দু’টো নিতে কি ভুলে যাচ্ছেন?
১৫.ফেভারিট বিষয়ে হঠাৎ করে আগ্রহ চলে গিয়েছে?

ফাইল ছবি

২, ৩, ৭, ৮, ৯, ১১, ১৩, ১৫ নম্বর
প্রশ্নগুলো নিজেকে করে যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে খুব সহজ সাবধান। কারণ জানবেন এগুলো সবই প্রাক ডিমেনশিয়ার লক্ষণ। অন্য প্রশ্নগুলোতেও যদি মন সায় দেয় তাহলেও বিষয়টা নিয়ে চিন্তার কারণ রয়েছে।

প্রথমেই সচেতন হন
ডিমেনশিয়া একটি নিউরো ডিজেনারেটিভ রোগ। সাধারণত ৬০-৬৫ বছরে হলেও আজকাল পঞ্চাশের কোঠা থেকে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে এই ভুলে যাওয়া অসুখে। তবে রোগটি প্রকাশ পাওয়ার কয়েক বছর আগে থেকেই কিন্তু ধীরে ধীরে লক্ষণ জানান দেয়। আর ঠিক তখনই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কারণ সঠিক সময়ে ডিমেনশিয়া শনাক্ত করে চিকিৎসা করলে রোগীর আয়ু কিছু বছর বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়।

অনেক রকম লক্ষণ
মনে রাখতে হবে ডিমেনশিয়ার কারণে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু ভুলে যাওয়াই ডিমেনশিয়ার একমাত্র লক্ষণ নয়। ডিমেনশিয়ার সাধারণ উপসর্গ হল সাম্প্রতিক কালের কিংবা একদিনের মধ্যে হওয়া কোনও ঘটনা, খুব পরিচিত কারোর নাম ভুলে যাওয়া, স্বল্পমেয়াদি স্মৃতিহ্রাস, বার বার একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা, সময় সম্পর্কে জ্ঞান হারিয়ে যাওয়া, টাকাপয়সার হিসাব করতে ভুল হওয়া, ঘনঘন মেজাজের পরিবর্তন, কোনও বিষয়ে সহজে সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, একই কাজে বেশিক্ষণ মনোযোগ রাখতে না পারা, নতুন জায়গায় গেলে হারিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

আরও পড়ুন :

সিভিএস বা কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম রোগ কী?

সাত নিয়ম মেনে ক্যান্সার প্রতিরোধ করুন

মাত্র ৩০ দিনে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলুন

কখন রিস্ক বেশি?
শরীরে কোনও ক্রনিক রোগ থাকলে অল্প বয়সে ডিমেনশিয়ার লক্ষণ শুরু হয়ে যেতে পারে বা ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে হার্টের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, থাইরয়েডসহ কোনও কোমর্বিটি থাকলে আগে সেগুলির নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। আবার বংশগতভাবেও ডিমেনশিয়া হতে পারে।

কী কী কারণে আক্রান্ত হতে পারেন?
অ্যালঝাইমার হলে ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু মনে রাখতে হবে অ্যালঝাইমারই একমাত্র কারণ নয়। বেশি মদ‌্যপান, মস্তিষ্কে কোনও টিউমার কিংবা ব্রেনে রক্ত জমাট বাঁধলে, ভিটামিন বি-১২-এর অভাব, থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, রক্তে গ্লুকোজ কম থাকলে, কোনও নিউরো ডিসঅর্ডার থাকলে তা থেকে ডিমেনশয়া দেখা দিতে পারে।

ওষুধ ছাড়াও প্রতিরোধ

  • ডিমেনশিয়া চিকিৎসার আগে রোগীর কোনও ক্রনিক রোগ থাকলে আগে সেটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • অ্যালকোহল সেবন ও ধূমপান কম করতে হবে।
  • ব্যালান্সড ডায়েট মেনে চলতে হবে। বেশি করে ফল, সবজি ডায়েটে রাখতে হবে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • নিয়মিত এক্সারসাইজ করতে হবে। পেশাগত কাজ ছাড়াও মস্তিষ্ক যাতে সক্রিয় থাকে এমন কোনও কাজে নিজেকে যুক্ত রাখতে হবে।
  • ডিমেনশিয়া রোগীর পরিবারের সদস্যদের সাহায্য গুরুত্বপূর্ণ। অনেকসময় রোগী নিজের মধ্যে লক্ষণ বুঝতে পারেন না কিংবা রোগটি লুকিয়ে রাখতে চান। তাই আপনি যদি বুঝতে পারেন প্রিয়জন ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের মানসিকভাবে রোগীর পাশে থাকা খুব জরুরি। সুত্র: সংবাদ প্রতিদিনের।

সূত্র : ভোরের কাগজ

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments