নেত্রকোনার কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকে আজ বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টিপাত হয়নি। এক সপ্তাহ পর আজ রোববার সকাল থেকে নেত্রকোনার আকাশে রোদের দেখা মিলেছে। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে প্রায় আধা ঘণ্টা হালকা বৃষ্টি হয়। এরপর আবার আকাশ পরিষ্কার দেখা যায়। সর্বশেষ ১০ জুন নেত্রকোনার আকাশে রোদ দেখা গিয়েছিল।
এদিকে কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলার উঁচু স্থান থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় বেশ কিছু স্থান ভেসে উঠছে। তবে খালিয়াজুরি, মোহনগঞ্জ ও মদন উপজেলার পরিস্থিতি অবনতির দিকে। আর বারহাট্টা, আটপাড়াসহ অন্যান্য উপজেলায় পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। বন্যায় এরই মধ্যে কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরে ৮০৫টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
প্লাবিত এলাকা। রোববার সকালে কলমাকান্দার লেংগুরা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকায় ছবি: প্রথম আলো
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহনলাল সৈকত বলেন, কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরে বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করছে। সোমেশ্বরী নদীর বিজয়পুর পয়েন্টে পানি এখন বিপৎসীমার ৫৭২ সেন্টিমিটার নিচে আছে। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৫ দশমিক ৮৯ সেন্টিমিটার। তবে উব্দাখালি, কংসসহ ধনু নদের পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, ভারী বৃষ্টিপাত না হলে বন্যার পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে।
আরও পড়ুন :
পানি নেমে যাওয়ায় সিলেটে রেল চলাচল শুরু
৩ সন্তানের জন্ম একইসাথে, নামও রাখা হলো সেইরকম : সেতু-স্বপ্ন-পদ্মা
বন্যা কমলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে জেলার প্রায় ১০টি উপজেলাতেই বন্যা সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরের অবস্থা ভয়াবহ রূপ নেয়। কলমাকান্দার ৩৩৪টি গ্রামেই বন্যার পানি ঢুকে প্রায় ৯২ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। একই অবস্থা দুর্গাপুর পৌর শহর ধরে সাতটি ইউনিয়নে। কলমাকান্দার লেংগুরা, রংছাতি, খারনৈ, বড়খাপন, কৈলাটি, পোগলা ও নাজিরপুর ইউনিয়নে অন্তত ৫৫৫টি কাঁচাপাকা ঘর সম্পূর্ণ ও আংশিক ভেঙে গেছে।
কমতে শুরু করেছে পানি।রোববার সকালে কলমাকান্দার লেংগুরা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকায় ছবি: প্রথম আলো
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম বলেন, বাড়িঘরের বেশি ক্ষতি হয়েছে লেংগুরা ইউনিয়নে। সেখানে ১৫৫টি ঘর ভেঙে গেছে। দুর্গাপুরের ইউএনও রাজীব উল আহসান বলেন, তাঁর উপজেলায় বন্যায় বাড়িঘরের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নে। সেখানে ৯৫টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বিরিশিরি, চণ্ডীগড়, সদর ইউনিয়ন মিলে ২৫০টি ঘর ভেঙে গেছে।
এদিকে বাড়িঘর হারিয়ে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন বানভাসি মানুষ। দুটি উপজেলায় ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৪৭০ জন ঠাঁই নিয়েছেন। এর মধ্যে কলমাকান্দায় ৩৬টি কেন্দ্রে ৫ হাজার ৩০০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, জেলার ২৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তাতে ১৯ হাজার মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন। বন্যাকবলিত প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম নিয়োজিত আছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হচ্ছে।
[…] […]
[…] […]