এসএসসির বাংলা পরীক্ষায় প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে চাই সৃজনশীলতা

এসএসসি পরীক্ষায় বাংলা প্রথম পত্র পুনর্বিন্যস্ত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সৃজনশীল অংশে ‘ক’ বিভাগে নির্ধারিত ১০টি গদ্য থেকে ৪টি, ‘খ’ বিভাগে ১০টি কবিতা থেকে ৪টি এবং ‘গ’ বিভাগে উপন্যাস ও নাটক থেকে ২টি করে মোট ১১টি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে। তোমাকে ১৫টি বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।  

তুমি তোমার পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো ১৫টি বহুনির্বাচনি প্রশ্নের সঠিক উত্তরের বৃত্ত কালো কালির বলপয়েন্ট কলম দিয়ে ভরাট করবে। মনে রেখো, একটি বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর সঠিক হলে ২ নম্বর পাবে, কিন্তু ভুল হলে ২ নম্বর কাটা যাবে। কাজেই বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর করার সময় খুবই সাবধান থাকবে। বহুনির্বাচনির উত্তরপত্রে কোনো কাটাকাটি বা ঘষামাজা করা যাবে না। একটি বৃত্ত ভরাট করে কেটে আবার আরেকটি বৃত্ত ভরাট করা যাবে না।  মঙ্গলবার (১৪ জুন) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি যেহেতু একটি বিশেষ ধরনের পরীক্ষা পদ্ধতি, তাই এর উত্তর লিখন-কৌশলও বিশেষ ধরনের। যেমন—

সৃজনশীল পদ্ধতিতে যেকোনো গল্প বা কবিতার একটি ভাব বা theme-এর আলোকে একটি মৌলিক উদ্দীপক এবং সংশ্লিষ্ট চার দক্ষতার চারটি প্রশ্ন থাকে। এই চারটি অংশ বা প্রশ্ন (জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা) মিলে কিন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশ্ন।

যেকোনো একটি উদ্দীপকের উত্তর লেখা শুরু করলে তার চারটি প্রশ্নের উত্তরই ধারাবাহিকভাবে করবে। একটি উদ্দীপকের জ্ঞানের উত্তর আরেক উদ্দীপকের প্রয়োগের উত্তর এ রকম করা ঠিক নয়।

আরও পড়ুন :

সকল কোচিং সেন্টার ১৫ জুন থেকে তিন সপ্তাহ বন্ধ থাকবে

এসএসসি পরীক্ষায় যে ধরনের ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে

চাকরির ইন্টারভিউয়ে বেতন কত চাইবেন, কীভাবে চাইবেন

জ্ঞানমূলক প্রশ্নের নম্বর—১। এর উত্তর একটি শব্দে, একাধিক শব্দে বা একটি বাক্যেও দেওয়া যাবে। তবে এ স্তরের উত্তর একটি পূর্ণাঙ্গ বাক্যে দিলে ভালো। আর এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে জ্ঞানমূলক প্রশ্নে যে তথ্যটা জানতে চাওয়া হয়েছে, সেটার বানান ভুল করলে উত্তর কাটা যাবে।

অনুধাবনমূলক প্রশ্নের মান ২। এর মধ্যে ১ নম্বর জ্ঞানের জন্য আর ১ নম্বর অনুধাবনের জন্য। অনুধাবনমূলক দক্ষতা মানে—বইয়ের কোনো কথা বা বাক্যের দ্বারা কবি বা লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন, সেটা বুঝতে পারা। সে ক্ষেত্রে প্রথম প্যারায় জ্ঞান অংশের উত্তরে বাক্যটির দ্বারা লেখক কী বুঝিয়েছেন, সেই কথাটি আগে লিখে দ্বিতীয় প্যারায় অনুধাবনমূলক অংশে উক্ত জ্ঞানটি বইয়ের আলোকে নিজের ভাষায় বুঝিয়ে দিতে হবে। জ্ঞান অংশের উত্তর আগে লিখে অনুধাবন অংশের উত্তর পরে লেখাই উত্তম। অনুধাবনমূলক প্রশ্নের শুরুতে অযথা কবি বা সাহিত্যিককে নানা বিশ্লেষণে বিশেষায়িত করার দরকার নেই। মনে রাখতে হবে সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর হবে—‘জিরো ফ্যাট’ অর্থাৎ চর্বিশূন্য। শুধু অনুধাবনেই নয়, কোনোক্রমে কোনো প্রশ্নের উত্তরেই অপ্রাসঙ্গিক কথা, অপ্রয়োজনীয় তথ্য বা বাহুল্যদোষ করা যাবে না।

প্রয়োগমূলক প্রশ্নের মোট নম্বর-৩। ১ নম্বর জ্ঞানে, ১ নম্বর অনুধাবনে এবং ১ নম্বর প্রয়োগে। প্রয়োগমূলক দক্ষতা মানে—তুমি তোমার পাঠ্যবই থেকে যা জেনেছ, যা বুঝেছ, তা নতুন ক্ষেত্রে, অর্থাৎ উদ্দীপকে প্রয়োগ করবে। কাজেই উদ্দীপকের ভাব বা বক্তব্য পাঠ্যবইয়ের যে ভাব বা দিকের সঙ্গে সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্যপূর্ণ, সেটাই প্রয়োগমূলক প্রশ্নের জ্ঞান। প্রথম প্যারায় এক বাক্যে জ্ঞানটি লিখে তারপর ওই দিকটি বা ভাবটি পাঠ্যবইয়ে কীভাবে ফুটে উঠেছে, তা দ্বিতীয় প্যারায় ব্যাখ্যা করতে পারো। সবশেষে ওই দিকটি উদ্দীপকে কীভাবে ফুটে উঠেছে, তা তৃতীয় প্যারায় ব্যাখ্যা করে তুমি তোমার উত্তর শেষ করতে পারো। তুমি চাইলে এক/দুই/িতন প্যারাতেও লিখতে পারো। উদ্দীপক পড়ে বুঝে ব্যাখ্যা করতে হবে।

উচ্চতর দক্ষতা মানেই একটা সিদ্ধান্তের ব্যাপার। প্রশ্নেই সাধারণত একটা অনুসিদ্ধান্ত দেওয়া থাকবে। যদি সিদ্ধান্তটি সঠিক হয় তাহলে সেটাকেই ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে, উদ্দীপকে প্রয়োগ করে প্রমাণ করতে হবে যে সিদ্ধান্তটি সঠিক। আর যদি সিদ্ধান্তটি ভুল হয়, তাহলে কেন ভুল সেটাও যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে হবে।

অনেক সময় সিদ্ধান্তটি আংশিক সত্য হতে পারে। সে ক্ষেত্রে উদ্দীপকের সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের যে অংশটুকুর মিল আছে, তা বর্ণনা করে যে যে ক্ষেত্রে মিল নেই, সেগুলোও বর্ণনা করতে হবে এবং সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দিতে হবে যে বক্তব্যটি বা সিদ্ধান্তটি আংশিক সত্য, পুরোপুরি নয়। বিচার-বিশ্লেষণ-সংশ্লেষণ, মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত দেওয়ার নামই উচ্চতর দক্ষতা। এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটি বা প্রশ্নটি ভালোভাবে পড়ে পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে বুঝতে হবে।

উচ্চতর দক্ষতার উত্তরে প্রথম প্যারায় জ্ঞান অংশে সিদ্ধান্তটি সঠিক না ভুল, সেটা কারণসহ উল্লেখ করতে পারো। দ্বিতীয় প্যারায় অনুধাবন স্তরে পাঠ্যবইয়ের অন্য দিকগুলো ব্যাখ্যা করে তৃতীয় প্যারায় উদ্দীপকের কথা এবং সবশেষে পাঠ্যবই ও উদ্দীপক মিলিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করে মূল্যায়ন করতে হবে অথবা প্রমাণ করতে হবে যে সিদ্ধান্তটি যথার্থ কি যথার্থ নয়।

লেখক : মো. হুমায়ূন কবীর, মাস্টার ট্রেইনার, প্রভাষক, সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঢাকা

সূত্র : দৈনিক শিক্ষা

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
অবশেষে প্রকাশ পেল ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ সংক্ষিপ্ত সিলেবাস - Ajker Valo Khobor
2 years ago

[…] এসএসসির বাংলা পরীক্ষায় প্রতিটি প্রশ… […]

বন্যা কমলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে - Ajker Valo Khobor
2 years ago

[…] এসএসসির বাংলা পরীক্ষায় প্রতিটি প্রশ… […]