ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২৪শে ফেব্রুয়ারি। আজ শুক্রবার এই যুদ্ধ একশ দিনে পড়ল।
যুদ্ধের শততম দিনে পূর্ব ইউক্রেনের পুরো রণাঙ্গন জুড়ে লড়াই চলছে। গুরুত্বপূর্ণ শহর সেভেরোদোনেৎস্কের অনেকটাই এখন রুশ বাহিনীর দখলে।
এই শহরের পতন ঘটলে প্রায় পুরো লুহানস্ক এলাকার নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার হাতে চলে যাবে। রাশিয়ার মূল লক্ষ্য পুরো ডনবাসের দখল নেয়া।
যদিও সংঘাতের শততম দিনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, এই যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিশ্চিত জয় পাবে ইউক্রেন।
রুশ কর্তৃপক্ষও দাবি করছে যুদ্ধে কিছু সফলতা তারা পেয়েছে।
রুশ আক্রমণ শুরু হবার পরদিন ২৫শে ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রাজধানী কিয়েভের কেন্দ্রে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে যে স্থান থেকে একটি জোরালো ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন, ঠিক সেই স্থান থেকেই তিনি আজ তার সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে এই ভিডিও বার্তাটি দিয়েছেন।
সেদিন তাকে কিয়েভ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাবার যে প্রস্তাব পশ্চিমা দেশগুলো দিয়েছিল, তা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
আরও পড়ুন :
যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের চেয়ে অস্ত্রের সংখ্যা বেশি
চলন্ত ট্রেনের নিচে পড়েও অক্ষত নারী
যুদ্ধের একশ দিন পরে তিনি এখনও তার পদে আসীন রয়েছেন।
তবে এই একশ দিনের যুদ্ধে সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে দেশের পূর্বাঞ্চলে প্রায় এক পঞ্চমাংশ রুশ বাহিনীর হাতে চলে গেছে।

পূর্বাঞ্চলে রুশ আক্রমণ বাড়ছে
দোনেৎস্ক অঞ্চলের শহর স্লোভিয়ানস্ক এখন রুশ আক্রমণের আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে বলে জানাচ্ছেন শহরের সামরিক প্রশাসনের প্রধান ভাদিম লিয়াখ।
“এ সপ্তাহে তিনবার শহরের ওপর গোলাবর্ষণ হয়েছে। তিনজন মারা গেছে, বেশ কিছু মানুষ আহত হয়েছে। শহরের অবকাঠামোর ওপরও গোলা দাগা হচ্ছে। এই মুহূর্তে শহরে পানি নেই। বিদ্যুতও ছিল না, তবে এখন সরবরাহ লাইন মেরামত করা হয়েছে।”
তিনি জানাচ্ছেন, পূর্বাঞ্চলের এই শহরটি ছেড়ে বাসিন্দারা পালাচ্ছে। তবে এখনও তার হিসাব মতে শহরের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ – প্রায় ২৫ হাজার বেসামরিক মানুষ শহরে রয়ে গেছে।
লুহানস্কের লিসিচ্যানস্ক শহরও তীব্র আক্রমণের মুখে রয়েছে। শহরের সামরিক প্রশাসনের প্রধান জানাচ্ছেন শহরে অবিরত গোলাবর্ষণ হচ্ছে এবং পরিস্থিতি খুবই খারাপ।
তীব্র লড়াই চলছে সেভেরোদোনেৎস্ক শহরেও।
রাশিয়ার দাবি
রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ আজ বলেছেন, রাশিয়া এই যুদ্ধে এগিয়ে আছে এবং লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত রাশিয়া লড়াই থামাবে না।
তিনি বলেছেন, এই যুদ্ধের অন্যতম প্রধান একটি লক্ষ্য মস্কোর ব্যাখ্যায় স্বঘোষিত দোনেৎস্ক গণ প্রজাতন্ত্র এবং লুহানস্ক গণ প্রজাতন্ত্রের জনগণকে রক্ষা করা।
“তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং কিছু ফল অর্জিত হয়েছে,” তিনি বলেন।
“বেশ কিছু অংশ থেকে নাৎসী পন্থী ইউক্রেনীয় সশস্ত্র সেনাদের হঠানো সম্ভব হয়েছে এবং মানুষজন সেখানে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে।
এই প্রয়াস অব্যাহত রাখা হবে যতক্ষণ না বিশেষ সামরিক অভিযানের মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জিত হচ্ছে।”

পূর্ব ইউরোপে রুশ সাফল্যের চড়া মাশুল- ইউকে
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তার সর্বসাম্প্রতিক গোয়েন্দা তথ্যে জানাচ্ছে: “ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে ডনবাস এলাকায় রাশিয়া এখন ‘কৌশলগত সাফল্য’ পাচ্ছে, কিন্তু এর জন্য রাশিয়াকে ‘উল্লেখযোগ্য রসদ হারানোর মাশুল’ গুণতে হয়েছে।”
রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে একটি একক এলাকা দখলে যে পরিমাণ ‘সৈন্য ও সমরাস্ত্র” মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা কতটা সুবিবেচনার কাজ হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ব্রিটেনের সমর বিশ্লেষকরা।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর গত ১০০ দিনের খতিয়ান বিশ্লেষণ করে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, রাজধানী কিয়েভ দখল ও ইউক্রেনের বর্তমান সরকার ফেলে দেবার যে প্রাথমিক লক্ষ্য নিয়ে রাশিয়া তার প্রতিবেশি দেশটির ওপর আক্রমণ চালিয়েছিল রাশিয়ার সেই লক্ষ্য ব্যর্থ হয়েছে।
তবে এরপরও ডনবাস এলাকার অংশ লুহানস্কের ৯০% এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে বলে ব্রিটিশ গোয়েন্দা তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে। এবং তাদের তথ্য অনুযায়ী আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এই এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভবত মি. পুতিনের হাতে চলে যাবে।