অভিষেকেই আইপিএল চ্যাম্পিয়ন গুজরাট লাইয়ন্স

রাজস্থান রয়্যালস ফাইনালে ২০০৮ সালের পর প্রথমবার, আইপিএলেই প্রথমবার গুজরাট টাইটানস। ফাইনালের আগে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, ইনিংসের মাঝপথে আলোর রোশনাইয়ে ভরপুর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম। উৎসবের জন্য প্রস্তুত ছিল গুজরাট টাইটানসের ‘ঘরের মাঠ’। অন্যদিকে রাজস্থানের জন্য এটি ছিল গত মার্চে অন্যলোকে চলে যাওয়া তাদের একমাত্র শিরোপাজয়ী অধিনায়ক শেন ওয়ার্নকে শিরোপা উৎসর্গ করার উপলক্ষ। আপাতত সেটিকে অপেক্ষায় রাখল গুজরাট। প্রথম কোয়ালিফায়ারের মতো দুই দলের লড়াইয়ের ফলটা বদলাল না ফাইনালে এসেও। ‘নতুন’ অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়ার অধীন ‘নতুন’ গুজরাট দলটাই জিতল আইপিএলের ১৫তম শিরোপা।

রাজস্থানকে ১৩০ রানেই আটকে রেখে অর্ধেক কাজ সেরে রাখা গুজরাট সেটি টপকে গেছে ৭ উইকেট ও ১১ বল বাকি রেখেই। ২০১৬ সালে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের পর আবার নতুন চ্যাম্পিয়ন দেখল আইপিএল, ২০০৮ সালে রাজস্থানের পর প্রথমবার আইপিএল খেলতে এসেই শিরোপা জিতল গুজরাট। যেখানে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিলেন পান্ডিয়া।

প্রথম মৌসুমে এসেই চ্যাম্পিয়ন হলো গুজরাট

প্রথম মৌসুমে এসেই চ্যাম্পিয়ন হলো গুজরাটআইপিএল

আইপিএল ফাইনালের ইতিহাসে ১৩০ রানের কম সম্বল নিয়ে জয়ের রেকর্ড ছিল একটিই—২০১৭ সালে জিতেছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। ইনিংসের মাঝপথে হয়তো সেটিই সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিল রাজস্থানের। শুরুতে সুযোগও পায় তারা। প্রথম ওভারেই ট্রেন্ট বোল্টের বলে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ তোলেন শুবমান গিল, তবে সেটি নিতে পারেননি যুজবেন্দ্র চাহাল। দ্বিতীয় ওভারে অবশ্য সাফল্য পায় গুজরাট, প্রসিধ কৃষ্ণার সিম-আপ ডেলিভারিতে বোল্ড হন ৭ বলে ৫ রান করা ঋদ্ধিমান সাহা। পাওয়ারপ্লেতে ম্যাথু ওয়েডকেও হারায় গুজরাট, ট্রেন্ট বোল্টের শিকার তিনি। প্রথম ৬ ওভারে গুজরাটের রান ছিল ২ উইকেটে ৩১, ফাইনালের চাপ স্পষ্টই ছিল গুজরাটের ব্যাটিংয়ে।

আরও পড়ুন :

★★নাটকীয় জয়ে ১৪তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা ঘরে তুললো রিয়াল মাদ্রিদ

★★আন্তর্জাতিক মোটর রেসে প্রথম বাংলাদেশি চ্যাম্পিয়ন অভিক আনোয়ার

পাওয়ারপ্লের পরের ২ ওভারেও চাপ ধরে রাখে রাজস্থান। প্রসিধ কৃষ্ণার করা নবম ওভারের দুই চারে চাপ কিছুটা আলগা হয় গুজরাটের, যদিও মাঝে চাহালকে দেখেশুনেই খেলেন পান্ডিয়া ও গিল। ১২তম ওভারে দুই ডানহাতির সামনেই রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে আনতে হয় সঞ্জু স্যামসনকে, তাঁকে মারা চার-ছয়ে প্রয়োজনীয় রান ও বলের ব্যবধান ৬-এ নামিয়ে আনেন পান্ডিয়া।

শুরুতে গুজরাটের ওপর চাপ তৈরি করেছিল রাজস্থান

শুরুতে গুজরাটের ওপর চাপ তৈরি করেছিল রাজস্থানআইপিএল

পান্ডিয়া-গিলের ৫৩ বলে ৬৩ রানের জুটি ভাঙেন চাহাল, নিজের শেষ ওভারে। মিডল লেগে পড়া বলটা সাত ডিগ্রি টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়ার আগে ছুঁয়ে যায় ৩০ বলে ৩৪ রান করা পান্ডিয়ার ব্যাট, চাহালের ওই ডেলিভারিতে গর্বিত হওয়ার কথা এমনকি ওয়ার্নেরও। স্লিপে এরপর ভুল করেননি জয়সোয়াল, ওই উইকেটেই আইপিএলের এ মৌসুমের সর্বোচ্চ উইকেট হয়ে যায় চাহালের।

তবে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ডেভিড মিলার ছিলেন তখনো, ছিলেন গিলও। স্পিনে দুর্দান্ত মিলার চড়াও হন অশ্বিনের ওপর, পাত্তা দেননি পেসারদেরও। তাঁর দ্রুতগতির ইনিংসে কাজটা বেশ সহজই হয়ে পড়ে গুজরাটের। ওবেদ ম্যাকয়কে ছয় মেরে তাদের জয় নিশ্চিত করেন ৪৩ বলে ৪৫ রানে অপরাজিত থাকা গিল, মিলার অপরাজিত থাকেন ১৯ বলে ৩২ রান করে।

ব্যাটিংয়ে কাজটা শেষ করে আসতে না পারলেও এর আগে বোলিংয়ে গুজরাটকে নেতৃত্ব দিয়েছেন পান্ডিয়াই। এ মৌসুমে বোলিংয়ে নিয়মিত না থাকলেও ফাইনালে পঞ্চম বোলার হিসেবে এসে ৪ ওভারে ১৭ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট, সেটিও রাজস্থানের ‘বিগ থ্রি’র—জস বাটলার, সঞ্জু স্যামসন, শিমরন হেটমায়ার। রশিদ খান ও পান্ডিয়া মিলে ৮ ওভারে মাত্র ৩৫ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট।

ফাইনালে বোলিংয়ে জ্বলে উঠলেন পান্ডিয়া

ফাইনালে বোলিংয়ে জ্বলে উঠলেন পান্ডিয়াআইপিএল

টসে হেরে ফিল্ডিং করতে নেমে গুজরাট পেসাররা উইকেটের সহায়তা আদায় করেছেন দারুণভাবে। মোহাম্মদ শামি ও যশ দয়ালের আঁটসাঁট বোলিংয়ে ইনিংসের প্রথম ২ ওভারে রাজস্থান মারতে পেরেছে মাত্র একটি বাউন্ডারি। যশস্বী জয়সোয়াল হাত খুলতে চেয়েছিলেন, তবে চতুর্থ ওভারে যশ দয়ালকে একটি ছয়ের পর আরেকটি মারতে গিয়ে মিড উইকেটে ধরা পড়েন ১৬ বলে ২২ রান করেই।

টুর্নামেন্টের আগের দুই ম্যাচেই রশিদ খানকে দেখেশুনে খেলছে রাজস্থান। তাঁকে পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারেই আজ আনেন হার্দিক পান্ডিয়া। রশিদের প্রথম বলে মিসফিল্ডে চার পান সঞ্জু স্যামসন, কিন্তু আফগান লেগ স্পিনারের ওপর চড়াও হননি তাঁরা। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে ৪৪ রান তোলার পর সপ্তম ওভারে লকি ফার্গুসনকে পরপর দুটি চার মারেন বাটলার, তবে রাজস্থান এরপর খোলসবন্দী হয়ে পড়ে।

অষ্টম থেকে ১৪তম—এই ৭ ওভারে বাউন্ডারি আসে মাত্র দুটি। এ সময়ে সঞ্জু স্যামসনকে ফেরান পান্ডিয়া, ১১ বলে ১৪ রান অরে শর্ট অফে গুড লেংথ বলে তুলে মারতে গিয়ে মিস টাইমিংয়ে ক্যাচ দেন রাজস্থান অধিনায়ক। এরপর দেবদূত পাড়িক্কালকে ‘মুক্তি’ দেন রশিদ। চারে নেমে পাড়িক্কাল ১০ বলে করেছেন মাত্র ২ রান। রাজস্থান সবচেয়ে বড় আঘাতটা পায় ১৩তম ওভারের প্রথম বলে। আবার গুজরাটের ‘নায়ক’ পান্ডিয়া, এবার তাঁর শিকার জস বাটলার। প্রথম ২৫ বলে ২৫ রান করেছিলেন বাটলার, গুজরাটের বিপক্ষে প্রথম কোয়ালিফায়ারেও ধীরগতির শুরু ছিল তাঁর। ৫৬ বলে সেদিন ৮৯ রান করেছিলেন বাটলার, আজ ফেরেন ৩৫ বলে ৩৯ রান করেই।

ওভার ফুরিয়ে আসছে, সঙ্গে উইকেট হারিয়ে ফেলা—রাজস্থান তখন দ্বিমুখী চাপে। শিমরন হেটমায়ার পান্ডিয়াকে দুই চার মেরে একটু চেষ্টা করেছিলেন, তবে ‘প্রতিশোধ’ নিতে বেশি সময় লাগেনি পান্ডিয়ার। রাজস্থান এরপর ব্যাটিংয়ে পথ খুঁজে পায়নি আর, পায়নি দ্বিতীয় শিরোপার দেখাও। রাতটা যে পান্ডিয়াদের, রাতটা গুজরাটের।

সূত্র : প্রথম আলো

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments