ঠিক আট মাস আগে স্পেনের এই ক্লাবটি মুদ্রার উল্টোদিকে ছিল, সেখান থেকে একের পর এক হারতে থাকা ম্যাচে জয় ছিনিয়ে এনে শেষ পর্যন্ত ট্রফিটাও মাদ্রিদেই নিয়ে গেলেন কারিম বেনজেমা ও তার সতীর্থরা।
রেয়াল মাদ্রিদের সদ্য পাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা এসেছে নাটকীয় সব ম্যাচ এবং দুর্দান্ত সব ফিরে আসার গল্প রচনা করে।
প্যারিসে ৩৬ মিনিট দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচের ৫৯ মিনিটে গোল করেন ব্রাজিলের ভিনিসিয়াস জুনিয়র- এই এক গোলের কারণে রেয়াল মাদ্রিদের সাথে আর ‘হিসেব চুকানো হয়নি’ মো সালার।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ঘরের মাটিতে মলদোভার তুলনামূলক কম পরিচিত ইরোপিয়ান ক্লাব শেরিফ তিরাসপোলের কাছে হেরে গিয়েছিল রেয়াল মাদ্রিদ।
সেখান থেকে ইউরোপের সেরা ক্লাবের এই শিরোপা জিতলো ক্লাবটি- তাও ১৪তম বার।
ইউরোপের অন্য যে কোনও ক্লাবের তুলনায় দ্বিগুণ সংখ্যক চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা রেয়াল মাদ্রিদের ট্রফি ক্যাবিনেটে।
আরও পড়ুন :
★★চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে আজ মুখোমুখি রেয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুল, কোন দলের শক্তি কী?
তবে এবারের এই অর্জন এতো তাৎপর্যময় ছিল যে ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার পরও রেয়াল মাদ্রিদের উদযাপন দেখে মনে হয়নি তারা আগেও ১৩ বার এই শিরোপা জিতেছে।
রেয়াল মাদ্রিদের ম্যানেজার কার্লো আনচেলত্তি ম্যাচ শেষে মাঠে নেমে ফুটবলারদের সাথে উদযাপনে মেতে ওঠেন।
ফরাসী ফুটবল বিশেষজ্ঞ হুলিয়েন লরেন্স বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভে বলেন, “চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এবারে রেয়াল মাদ্রিদের চেয়ে ভালো এমন অনেক দল ছিল।”
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক ফুটবলার রিও ফার্দিনান্দ বিটি স্পোর্টসকে বলেছেন, “এরা অবিশ্বাস্য এক কাজ করলো। রেয়াল মাদ্রিদ এবার এমন এক মৌসুম কাটাবে কেউ প্রত্যাশাই করেনি। বাধা এসেছে তারা চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সংকল্প দিয়ে সেস বাধা উৎরে গেছে।”
রিও ফার্দিনান্দের মতে, তিনি এর আগে কখনোই এতো কঠিনভাবে ফাইনালে কোনও দলকেই আসতে দেখেননি।
আক্ষরিক অর্থেই তাই, ফাইনাল ম্যাচসহ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা তিন দলকে হারিয়ে রেয়াল মাদ্রিদ শিরোপা জিতলো।

ফাইনালে আসতে রেয়ালকে ১২টি ম্যাচ খেলতে হয়েছে, যার মধ্যে চারটিতেই হেরেছে ক্লাবটি, আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের এই হার লিভারপুলের গোটা মৌসুমেরই মাত্র চতুর্থ হার।
এসব পরিসংখ্যান স্বত্ত্বেও কার্লো আনচেলত্তির ক্লাব এখন ইউরোপের রাজা তা বলতে কোনও দ্বিধাই নেই।
এবং এই পথে নাটকীয় সব মুহুর্ত ফুটবল দর্শকদের উপহার দিয়ে এসেছে রেয়াল মাদ্রিদ।
প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের কাছে ২-০ গোলে পিছিয়ে ছিল রেয়াল, ১৭ মিনিটের ব্যবধানে তিন গোল দিয়ে মেসি-নেইমার-এমবাপেকে নিয়ে গড়া দলটিকে ছিটকে দিয়েছে রেয়াল।
শেষ দশ মিনিট পর্যন্ত আগের মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন চেলসির সাথে ৪-৩ গোলে পিছিয়ে ছিল রেয়াল মাদ্রিদ, ৮০তম মিনিটে গোল করেন রদ্রিগো, এরপর ৯৬ মিনিটে কারিম বেনজেমা নিশ্চিত করেন, রেয়াল মাদ্রিদ বাদ পড়তে আসেনি এখানে।
ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে আরও দুর্দান্ত গল্প, এটাকে সকল ফিরে আসার সেরা ফিরে আসা বলা হচ্ছে।
পেপ গার্দিওলার ম্যান সিটি ৫-৩ গোলে এগিয়ে ছিল, তখন নির্ধারিত সময় শেষ হতে বাকি এক মিনিট, আবারও ব্রাজিলের রদ্রিগো ৯০তম মিনিটেই দুটি গোল করলেন, ৯৫তম মিনিটে ঠান্ডা মাথায় এক পেনাল্টি নিয়ে কারিম বেনজেমা দলকে ফাইনালে তুলে আনলেন।

বেনজেমা ইংলিশ ক্লাবগুলোর বিপক্ষে সাতটি গোল করেছেন এই মৌসুমে।
রিও ফার্দিনান্দ বলেছেন অনেক ক্লাবই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে, কিন্তু রেয়াল এবার সবচেয়ে কঠিন উপায়ে জিতেছে।
রেয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুলের হয়ে খেলা সাবেক ফুটবলার স্টিভ ম্যাকম্যানামান বলেন, “রেয়াল মাদ্রিদ সবসময় যা করে এসেছে তাই করলো। ফাইনালে উঠলে রেয়াল মাদ্রিদই জেতে। কিন্তু যে কায়দায় এবার জিতলো এটা সর্বকালের সেরা সাফল্যের একটি।”
“রেয়াল মাদ্রিদের দলটি দুর্বল কিন্তু তার উঠেছে এবং তারা ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছে।”
‘এখন বেনজেমা ব্যালন ডি অর না পেলে সেটা হবে হতাশাজনক’।
যদিও বেনজেমা ফাইনালে গোল পাননি, কিন্তু তিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রেয়াল মাদ্রিদের ত্রাণকর্তা ছিলেন গোটা মৌসুম।
চৌত্রিশ বছর বয়সী এই ফুটবলারের সেরাটা বের করে এনেছেন কার্লো আনচেলত্তি।
ইউরোপিয়ান এই টুর্নামেন্টের মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৫টি গোল করেছেন কারিম বেনজেমা।
টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিকও করেছেন তিনি।
বছরের সেরা ফুটবলারের মর্যাদার পুরস্কার ব্যালন ডি অর পাওয়ার জন্য যথেষ্ট এটা?
রিও ফার্দিনান্দ মনে করছেন আর কোনও প্রশ্ন থাকা উচিৎ হবে না।
বেনজেমা ব্যালন ডি অর না পেলে সেটা হবে হতাশাজনক।

কার্লো আনচেলত্তির জন্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা নতুন কিছু নয়, এর আগেও তিনবার জিতেছেন এবার পেলেন চতুর্থ শিরোপা কোচ হিসেবে।
ইতিহাসে আনচেলত্তির চেয়ে বেশি ইউরোপ সেরার এই শিরোপা কেউ জেতেনি।
এই ইতালিয়ান ম্যাচ শেষে বলেন, ‘আমি রেকর্ড ম্যান।’
“আমি মনে করি আমরা সবচেয়ে কঠিন সব খেলা পার করেই শিরোপা জিতেছি।”
পুরো মৌসুম যদি কারিম বেনজেমা টানেন রেয়াল মাদ্রিদকে ফাইনালে থিবো কুর্তোয়া ছিলেন রেয়ালের নায়ক।
লিভারপুলের গোটাকয়েক প্রায় নিশ্চিত গোলমুখী শট ঠেকিয়ে দিয়েছেন তিনি।
দুই হাজার আঠারো সালে ইংল্যান্ড থেকে স্পেনে পাড়ি জমান বেলজিয়ান গোলকিপার থিবো।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল জয়ের পর থিবো কুর্তোয়া বলেন, তিনি মনে করেন না তিনি যথেষ্ট সম্মান পেয়েছেন।
“আমি যদি আজ ব্যর্থ হতাম অনেক টুইট আসতো আমাকে ছোট করে দেখানো হতো সেখানে। সেটাও একটা দিক খেলার।”
ইংল্যান্ডে সাত বছর ছিলেন কুর্তোয়া, দুইবার প্রিমিয়ার লিগ শিরেপা ও একটি এফএ কাপ শিরোপাও জিতেছিলেন সেখানে।
তবে তিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এই ফাইনালের জয়টাকে বিশেষ হিসেবেই দেখছেন।
“আমি আমার ক্যারিয়ারের জন্যই এই ফাইনালটি জিততে চেয়েছিলাম। আমি যতটা পরিশ্রম করেছি সেই তুলনায় ইংল্যান্ডে তেমন সম্মান পাইনি।”
“এমনকি দারুণ মৌসুম কাটিয়েও কথা শুনতে হয়েছে আমাকে।”
“আমি আসলেই আমার দলের ওপর গর্বিত। আমরা লেগে ছিলাম এবং আমাকে যখন দরকার হয়েছে আমি সেখানে ছিলাম।”
বিটি স্পোর্টসকে লিভারপুলের সাবেক অধিনায়ক স্টিভেন জেরার্ড বলেছেন, “এর আগে যদি তার নামের পাশে সম্মান না থাকে, এবার থাকবে।”
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের ম্যাচ সেরাও হয়েছেন থিবো কুর্তোয়া।
[…] […]
[…] […]
[…] […]