ঈদে মাংস খাবেন বলে সারা বছর সমিতিতে সঞ্চয়

টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় স্থানীয় কয়েকজন মিলে সমিতি গড়ে ঈদের আগে গরুর মাংস কেনা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ সমিতির সদস্যরা সাপ্তাহিক কিংবা মাসিক ভিত্তিতে বছরজুড়ে চাঁদা দেন। এরপর ঈদের আগে সমিতিতে জমা হওয়া অর্থ দিয়ে গরু কিনে মাংস সবাই মিলে ভাগ করে নেন।

এতে ওই এলাকার অসচ্ছল পরিবারগুলো ঈদে বাড়তি আনন্দ পায় এবং তাদের ওপর আর্থিক চাপও কমে যায়। পাড়া বা মহল্লায় সমিতিগুলো ‘মাংস সমিতি’ নামে পরিচিত।

টাঙ্গাইলের সখীপুর ও সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, মূলত পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এ ধরনের সমিতি গঠন করা হয়। প্রতিটি মাংস সমিতির সদস্যসংখ্যা ৩০ থেকে ৬০। প্রত্যেক সদস্য সপ্তাহে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা করে চাঁদা দেন। ঈদের দু–এক দিন আগে জমা করা টাকায় গরু কিনে এনে জবাই করে সদস্যরা ওই মাংস ভাগ করে নেন।

শুরুতে শুধু নিম্নবিত্ত মানুষ এ ধরনের সমিতি করলেও এখন মধ্যবিত্তরাও এসব সমিতির সদস্য হচ্ছেন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও এ ধরনের সমিতি করেছেন।

সখীপুরের কাঁকড়াজান ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম হামিদপুর। ওই গ্রামের পল্লিচিকিৎসক দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের গ্রামে পাঁচ থেকে ছয়টি মাংস সমিতি আছে। প্রতিবছর ঈদের দু-এক দিন আগে সঞ্চিত টাকা দিয়ে গরু কিনে জবাই করে তাঁরা মাংস ভাগাভাগি করে নেন।

ওই গ্রামের ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের সমিতিতে ৫৩ জন সদস্য আছেন। তাঁরা প্রত্যেকে মাসে ২০০ টাকা করে জমা রাখেন। বছর ঘুরে সমিতিতে জমা হয় এক লাখ টাকার বেশি। এ টাকা দিয়ে গরু কিনে সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। প্রত্যেকের ভাগে পাঁচ থেকে ছয় কেজি করে মাংস পড়ে।

আজ রোববার সকালে রায়গঞ্জ উপজেলার রায়গঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ধানগড়া পশ্চিমপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি দুটি স্থানে গরু জবাই করে মাংস কাটছেন কসাইরা।
একটি সমিতির উদ্যোক্তা সেলিম রেজা বলেন, ‘এলাকায় অনেক আগে থেকে বন্ধুদের সঙ্গে সমিতি করে মাংস কিনি। এতে ঠকার আশঙ্কা থাকে না এবং মাংসের মান ভালো হয়।’

উপজেলার রণতিথা এলাকার দুই গৃহবধূ বলেন, সমিতির মাংস নেওয়ার জন্য সারা বছর ধরে তাঁরা টাকা জমান। ঈদের দু–এক দিন আগে গরু জবাই করা হয়। এতে ঈদের আগে থেকেই এর আমেজ শুরু হয়।

ধানগড়া বাজারের মাংস ব্যবসায়ী বাবু ইসলাম বলেন, এবার রোজার ঈদে বিভিন্ন এলাকার ৩০টি গরু জবাই করে মাংস কাটার কাজ পেয়েছেন তিনি। গতকাল শনিবার থেকে কাজ শুরু হয়েছে। এ কাজ কাল সোমবার সকাল পর্যন্ত চলবে বলে জানান তিনি। তাঁর দলে চারজন কসাই কাজ করেন। এবারের ঈদে সমিতির গরুর সংখ্যা গত বছরের চেয়ে বেশি বলে জানান তিনি।

সখীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, সমবায় সমিতির মতো মাংস সমিতিও এখন গ্রামের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সারা বছর সমিতিতে সঞ্চয় করে ঈদের আগে পশু কিনে জবাই করে মাংস ভাগ নিচ্ছেন তাঁরা। এতে মাংসের দামও কম পড়ে এবং মাংসের মানও ভালো হয়।

সূত্র: প্রথম আলো

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Hridoy Varaby
3 years ago

আমাদের সরিষাবাড়িতেও এমন দেখা যাচ্ছে।

২০ লাখ টাকা দাম হাকা হলো ৩৬ মণ ওজনের ‘স্বপ্নরাজ’ এর - Ajker Valo Khobor
3 years ago

[…] ঈদে মাংস খাবেন বলে সারা বছর সমিতিতে সঞ… […]