মাধ্যমিকের ১২ বছরের কম বয়সীদের অর্থাৎ ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস কীভাবে হবে

করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে দ্বিতীয় ধাপে এক মাস বন্ধের পর আগামীকাল মঙ্গলবার খুলছে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষা প্রশাসন জানিয়েছে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষার্থী করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে, তারাই কেবল শ্রেণিকক্ষে যেতে পারবে। বাকিদের ক্লাস হবে অনলাইনে। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থীর বয়স এখনো ১২ বছরের কিছু কম। তাদের সশরীর ক্লাসের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাও নেই। ফলে তাদের ক্লাসের বিষয়টি নিয়ে একধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।

একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিকা দিতে না পারা শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়ে কিছুটা অসুবিধা হবে। কারণ, প্রথমত অনলাইন ক্লাসের সুবিধা অনেক শিক্ষার্থীর নেই। আবার সশরীর ক্লাস এবং অনলাইনে ক্লাস—এ দুই কার্যক্রম একসঙ্গে চালিয়ে নেওয়ার মতো সামর্থ্যও অনেক বিদ্যালয়ের নেই।

বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকেরাও চিন্তিত। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা আজ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর সন্তানের বয়স ১২ বছরের কিছু কম। ফলে তার টিকা দেওয়া যায়নি। এ অবস্থায় তাঁর সন্তানের মতো শিক্ষার্থীদের ক্লাস কীভাবে হবে, সেটি আজ বিকেল পর্যন্ত জানতে পারেননি।

অবশ্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণির যেসব শিক্ষার্থীর বয়স এখনো ১২ বছর হয়নি, তারা আপাতত অনলাইনেই ক্লাস করবে। এই বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা হতে পারে দুই থেকে তিন লাখ। দু-এক মাসের মধ্যে তাদের বয়স ১২ বছর পূর্ণ হয়ে গেলে টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া যারা করোনার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করতে পারেনি, তারাও আপাতত অনলাইনে ক্লাস করবে। শিক্ষার্থীদের টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া এ মাসে শেষ হতে পারে বলে তিনি আশা করেন।

দেশে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত (১২ বছরের বেশি বয়সী) মোট শিক্ষার্থী প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখ। মাউশির ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (ইএমআইএস) একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রথম ডোজ টিকা নেওয়া হয়ে গেছে প্রায় সবার। আর দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছে ৫০ লাখের মতো।

করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছিল সরকার। দীর্ঘ ১৮ মাস পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছিল, সেই সময় বেশ কিছু নির্দেশনা মানতে হয়েছিল।

নির্দেশনা মেনে ক্লাস চলার মধ্যেই দেশে নতুন করে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ২১ জানুয়ারি আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করে সরকার; যা আজ সোমবার পর্যন্ত বহাল ছিল। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলবে আগামী ২ মার্চ থেকে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও এখন ক্লাস হবে স্বল্প পরিসরে। অর্থাৎ গত জানুয়ারিতে শিক্ষাবর্ষ শুরুর পর যেভাবে ক্লাস হচ্ছিল, সেভাবেই ক্লাস হবে। গত জানুয়ারিতে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর পর ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রতিদিন চারটি বিষয়ের ওপর ক্লাস হচ্ছিল। আর দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন তিনটি বিষয়ের ক্লাস নেওয়া হচ্ছিল। অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে দুই দিন ক্লাস হয়। এই দুই দিনের প্রতিদিন তিনটি করে বিষয়ের ওপর ক্লাস নেওয়া হচ্ছিল। এ ছাড়া ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে এক দিন তিনটি বিষয়ে ক্লাস নেওয়া হয়।

রাজধানীর শহীদ মনু মিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা জানান, যারা দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে পারেনি বা যাদের বয়সজনিত সমস্যায় টিকা নিতে পারেনি, তাদের আপাতত বাড়িতে থাকতে খুদে বার্তা দিয়েছেন। তাদের পাঠদান অনলাইনে ও অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে হবে।

১২ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থী এবং যারা দ্বিতীয় ডোজ পায়নি, তাদের অনলাইন পাঠদানের ওপর জোর দেওয়ার কথা জানান মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম।

সূত্র : প্রথম আলো

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments