টি২০, ওয়ানডের পর টেস্ট অধিনায়কত্বও ছাড়লেন ভারতের সফলতম অধিনায়ক বিরাট কোহলি

ভারতের টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকেও সরে দাঁড়ালেন বিরাট কোহলি। এর আগে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছিলেন, ওয়ানডের অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারের পর আজ টুইটারে দেওয়া এক বিবৃতিতে টেস্টের নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিলেন টেস্টে ভারতের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক। ফলে শেষ হয়ে গেল ভারত ক্রিকেটে ‘অধিনায়ক কোহলি’ অধ্যায়।

সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে সংক্ষিপ্ততম সংস্করণের নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন কোহলি। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে ওয়ানডের অধিনায়কত্ব থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয় বিসিসিআই। সীমিত ওভারে দুই সংস্করণেই দায়িত্ব দেওয়া হয় রোহিত শর্মাকে। এবার নিজে থেকেই টেস্টের দায়িত্ব ছাড়লেন কোহলি।

নিজের বিবৃতিতে কোহলি বলেছেন, ‘দলকে ঠিক পথে এগিয়ে নিতে কঠোর পরিশ্রম, খাটুনি, নিরন্তর সাধনার সাত বছর হয়ে গেল। চরম সততার সঙ্গে এ কাজটা করেছি, কোনো কিছুতে পিছপা হইনি। সবকিছুরই একটা মুহূর্তে গিয়ে থেমে যেতে হয়, ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে আমার এখন সে সময়।’

শেষ হয়ে গেল ভারত ক্রিকেটে 'অধিনায়ক কোহলি' অধ্যায়

শেষ হয়ে গেল ভারত ক্রিকেটে ‘অধিনায়ক কোহলি’ অধ্যায়ছবি: এএফপি

নেতৃত্ব ছাড়ার ব্যাপারে নিজের সঙ্গে কোনো লুকোচুরি নেই তাঁর, জানিয়েছেন কোহলি, ‘অনেক উত্থান-পতন ছিল এ ভ্রমণে, তবে কখনোই বিশ্বাস বা নিবেদনের ঘাটতি ছিল না। আমি সব সময়ই বিশ্বাস করে এসেছি, যেটিই করি না কেন, ১২০ শতাংশ দিয়ে করব। সেটা যদি না পারি, তাহলে নিজের জন্য এটা উপযুক্ত কাজ নয়। মনের দিক দিয়ে আমি পুরোপুরি পরিষ্কার এ ব্যাপারে, না হলে দলের প্রতি অন্যায় করা হবে।’বিজ্ঞাপন

এর আগে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব নিয়ে অবশ্য মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন কোহলি ও বিসিসিআই। তাঁকে আগে থেকে জানানো হয়নি, বিসিসিআইয়ের বিপক্ষে এমন অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। অন্যদিকে বিসিসিআই বলেছিল, সীমিত ওভারে দুজন অধিনায়ক রাখতে চায়নি তারা। টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব না ছাড়ার অনুরোধও করা হয়েছিল কোহলিকে—বিসিসিআইয়ের বক্তব্য ছিল এমন। কোহলি অবশ্য সেটি অস্বীকার করেছিলেন, যেমন বিসিসিআই অস্বীকার করেছিল সময়মতো ওয়ানডে অধিনায়কত্বের ব্যাপারটি কোহলিকে না জানানোর কথা।

দায়িত্ব ছাড়ার পর সতীর্থদের সঙ্গে অবশ্য বিসিসিআইকে  ধন্যবাদ জানিয়েছেন কোহলি, ‘এ লম্বা সময় ধরে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগের জন্য বিসিসিআইকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, সতীর্থদের ধন্যবাদ দেওয়া। যারা প্রথম দিন থেকেই দলকে নিয়ে আমার লক্ষ্য পূরণ করে গেছে, কোনো পরিস্থিতিতেই পিছপা হয়নি। তোমরা আমার এ ভ্রমণকে স্মরণীয় ও সুন্দর করে তুলেছ।’

এরপর আলাদা করে বলেছেন সাবেক প্রধান কোচ রবি শাস্ত্রী ও সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির কথা, ‘টেস্ট ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করে যাওয়ার পেছনে যে যন্ত্র, সেটির ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করা রবি (শাস্ত্রী) ভাই এবং সাপোর্ট স্টাফের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনাদের ভূমিকা বিশাল ছিল। সবার শেষে এম এস ধোনিকে অনেক বড় একটা ধন্যবাদ, যে অধিনায়ক হিসেবে আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন, আমাকে ভারত ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে সমর্থ হিসেবে ভেবেছিলেন।’

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জেতার পরও সিরিজ হেরেছে ভারত। কোহলি নেতৃত্ব ছাড়লেন এরপরই

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জেতার পরও সিরিজ হেরেছে ভারত। কোহলি নেতৃত্ব ছাড়লেন এরপরইছবি: এএফপি

২০১৪ সালে হঠাৎ করেই ধোনি টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলে দায়িত্ব পান কোহলি। সব মিলিয়ে এ সংস্করণে রেকর্ড ৬৮টি ম্যাচে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে তাঁর দল জিতেছে ৪০টি ম্যাচে। সাফল্যের হারে (৫৮.৮২ শতাংশ জয়) কোহলির চেয়ে কেউ এগিয়ে নেই ভারতে। সব মিলিয়েই তাঁর চেয়ে এগিয়ে আছেন মাত্র তিনজন। তাঁরা তিনজনই অস্ট্রেলিয়ার—স্টিভ ওয়াহ, ডন ব্র্যাডম্যান ও রিকি পন্টিং।

কোহলির অধিনায়কত্বে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ জিতেছে ভারত, দেশের মাটিতে তো ভারত প্রায় অপরাজিতই। গত বছর প্রথম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠলেও সাউদাম্পটনে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছিল তারা। সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট জিতলেও প্রথমবারের মতো তাদের মাটিতে সিরিজ জয় অধরাই থেকে গেছে ভারতের।

সূত্র : প্রথম আলো

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments