ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: হলে বিবাহিত ছাত্রীর থাকতে মানা, কোথা থেকে এলো এ নিয়ম?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলে সম্প্রতি একজন বিবাহিত ছাত্রীর আসন কেটে দেয়া নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হবার পর বিষয়টি নিয়ে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর এবং তিনটি ছাত্রী হল সামসুন্নাহার হল, কুয়েত-মৈত্রী হল এবং সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্টদের আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছে।

নোটিসে তিনদিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে ওই বিধান বাতিলে ব্যবস্থা না নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রভোস্ট কমিটির পূর্ব নির্ধারিত সভা অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে, সেখানে বিষয়টি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বড় অংশই আবাসিক হলে থাকার সুযোগ পান না, হলে আসন সংখ্যা কম থাকার কারণে।

আসন সংখ্যার বিপরীতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় এমনিতেই হলে একটি আসনের চাহিদা ব্যাপক।

ফলে বিবাহিত হবার কারণে কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলে যখন একজন ছাত্রীর হলের আসন বাতিল করা হয়, তখন এ নিয়ে গণমাধ্যমে এবং সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়।

এরপর আরো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনার কথা শোনা গেলেও পরে কর্তৃপক্ষ সে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে, বিবাহিত এবং অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকতে পারবে না, এমন কোন আইন নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন পরিচালিত হয় যে ১৯৭৩ এর অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী তাতে বিবাহিত এবং অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীর হলে থাকা বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই।

তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, এ বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় হল পরিচালনা সংক্রান্ত একটি নীতিমালার মধ্যে উল্লেখিত আছে।

ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে, “কোনো ছাত্রী বিবাহিত হলে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। অন্যথায় নিয়ম ভঙ্গের কারণে তার সিট বাতিল হবে।

পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্রী হল এবং বাংলাদেশের অন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের জন্য তৈরি হলে রোকেয়া হলের নীতিমালাই অনুসরণ করা হয়।

এভাবেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ পর্যায়ের ছাত্রীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ছাত্রাবাসে অবস্থানের ক্ষেত্রে এ নিয়ম চালু হয়ে গেছে।

তবে যে সময় এ নিয়ম চালু হয়, সে সময় রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থার মধ্য থেকে নারী শিক্ষার্থীরা পড়তে আসতেন।

যে কারণে অভিভাবকদের আস্থা অর্জনে তৎকালীন সমাজে প্রচলিত অনেক নিয়ম কানুন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল হলের নীতিমালায়।

তবে গবেষকেরা মনে করেন, বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকতে না দেয়ার পেছনের কারণটি সামাজিক ট্যাবু সম্পর্কিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষক এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবায়দা নাসরিন মনে করেন, বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় যৌনতার বিষয়টি নিয়ে যে ধরণের ট্যাবু আছে, সেখান থেকেই এ ধরণের নিয়ম এসেছে।

“সামাজিক ট্যাবুর কারণে মানুষজন এখনো ভাবে, আর যখন মেয়েদের হল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তখন আরো বেশি ভাবত যে বিবাহিত মেয়েরা তাদের যৌনতা এবং দাম্পত্যের বিষয়টি অবিবাহিত মেয়েদের সঙ্গে শেয়ার করবে। আর তার ফলে অবিবাহিত মেয়েরা খারাপ হয়ে যাবে।”

যে পরিস্থিতিতে এবং যেভাবে তৈরি হয়েছিল বিশেষ বাহিনী র‍্যাব
পলাতক মেজর জিয়া বাংলাদেশের ভেতরেই আছে?
চীনে ডাইনোসোরের ভ্রূণের অভিনব জীবাশ্ম উদ্ধার
একাত্তরের যুদ্ধের খবর পূর্ব পাকিস্তানের সংবাদপত্রে কতটা ছাপা হতো?
বিবাহিত ছাত্রীদের ক্ষেত্রে এমন নিয়ম থাকলেও, বিয়ে করলে বা সন্তানের বাবা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য সিট বাতিলের বিধান নেই।

পরবর্তীতে, ১৯৫৬ সালের পর রাষ্ট্র ও সমাজে অনেক পরিবর্তন আসলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলের নিয়ম বদলায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যা বলছে

গত সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে ওই নিয়মটি বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বিবিসিকে বলেছেন, এখন নিয়মটি পর্যালোচনা এবং সংস্কারের চিন্তাভাবনা করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

“নিয়মটি কাগজকলমে আছে, কিন্তু এর তেমন বাস্তবায়ন ছিল না। তার পরেও যেহেতু এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে, আমরা এটি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি,” তিনি বলেছেন।

“আজ (বুধবার) সন্ধ্যায় আমাদের পূর্ব নির্ধারিত প্রভোস্ট কমিটির মিটিং আছে, সেখানে আমরা এটি আলাপ করব। সেখানে আলাপের পর হয়ত বোঝা যাবে আমরা কী করব আর কিভাবে করব,” বলেছেন অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।”

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments