নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে চ্যাম্পিয়নের তালিকায় বাংলাদেশ

নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে ‘বেস্ট মিশন কনসেপ্ট’ ক্যাটাগরিতে গ্লোবাল চ্যাম্পিয়নের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশের দল ‘মহাকাশ’ছবি: ইফতেখার আনাম

১০ ডিসেম্বর রাতে সুখবর এল। নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে ‘বেস্ট মিশন কনসেপ্ট’ ক্যাটাগরিতে গ্লোবাল চ্যাম্পিয়নের স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশের দল ‘মহাকাশ’। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার কিছুক্ষণ পরই কথা হলো দলনেতা সুমিত চন্দের সঙ্গে। জানতে চাইলাম, ‘বিজয়ী হিসেবে আপনাদের দলের নাম শুনে কি চমকে গেছেন?’ সুমিত বললেন, ‘একদমই না। আমাদের তো আগেই ই–মেইলে জানানো হয়েছিল। তবে শর্ত ছিল, আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে কাউকে বলতে পারব না। এ ছাড়া ফাইনালিস্ট ৩৭টি দলের মধ্যে যখন স্থান পেলাম, তখনই বুঝতে পারছিলাম, এবার একটা কিছু হতে যাচ্ছে।’

মহাকাশ নিয়ে মহাযজ্ঞ

১০ বছর ধরে ‘স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ’ আয়োজন করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। প্রতিযোগিতার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে—প্রোগ্রামার, বিজ্ঞানী, ডিজাইনার, উদ্ভাবক, গল্পকথক, প্রযুক্তিবিদদের জন্য এটি একটি আন্তর্জাতিক হ্যাকাথন। ৪৮ ঘণ্টার এই হ্যাকাথনে নাসার দেওয়া উপাত্ত (ডেটা) ব্যবহার করে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন প্রতিযোগীরা।

১৬২টি দেশ থেকে ৪ হাজার ৫৩৪টি দলের প্রায় ২৮ হাজার প্রতিযোগী এবারের আসরে অংশ নিয়েছিলেন। জয়ী ১০ দলের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশের ‘মহাকাশ’। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সুমিত চন্দ, আলভি রওনক, সামির ইমতিয়াজ, শিশির কাইরী এবং বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির তৃষা বসাক ও মমিনুল হক এ দলের সদস্য।

যে প্রকল্পে এল পুরস্কার

মহাকাশচারীরা বিভিন্ন মিশনে গিয়ে যেসব সমস্যায় পড়েন, নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের প্রতিযোগীরা মূলত সেসব সমস্যারই সমাধান খুঁজতে চেষ্টা করেন। এবার চ্যালেঞ্জ ছিল মোট ২৮টি। বাংলাদেশের দল ‘মহাকাশ’ যে সমস্যাটি নিয়ে কাজ করেছে, সেটি বুঝিয়ে বললেন সুমিত, ‘চাঁদের পৃষ্ঠে একধরনের ধূলিকণা থাকে। ওখানে যেহেতু মাধ্যাকর্ষণ কম কাজ করে, তাই এই ধুলা বাতাসে ভাসতে থাকে। ফলে নমুনা সংগ্রহ করতে মহাকাশচারীদের সমস্যা হয়। কখনো কখনো ধুলা তাঁদের স্পেস স্যুটে লেগে যায়। যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ারও ভয় থাকে।’ টিম মহাকাশ এমন একটি টুলসেটের নকশা করেছে, যা এই ধুলিকণাকে একটি চেম্বারে আটকে ফেলে; বাতাসে ভাসতে দেয় না। সুমিতেরা তাঁদের ডিজাইন করা টুলের নাম দিয়েছেন ‘অ্যাডভান্সড রেগোলিথ স্যাম্পলার সিস্টেম’ (এআরএসএস)। বিচারকদের কাছে ভাবনাটি বাস্তবসম্মত এবং কার্যকর মনে হয়েছে বলেই পুরস্কার পেয়েছে ‘মহাকাশ’।

প্রতিযোগিতার সবচেয়ে কঠিন দিক কী ছিল? জানতে চাই আলভি রওনকের কাছে। কুয়েট থেকে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে তিনি এখন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। আলভি বললেন, ‘সবচেয়ে কঠিন ছিল সময় ব্যবস্থাপনা। আমাদের ছয়জনের মধ্যে দুজন এরই মধ্যে চাকরিতে ঢুকে গেছে। বাকিরাও বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। নানা ব্যস্ততার মধ্যেও মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমাদেরকে সমস্যার সমাধান করতে হয়েছে।’ দলনেতা সুমিত যোগ করলেন, ‘আমরা নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগ করে নিয়েছিলাম। সবাই যাঁর যাঁর দায়িত্বটা ঠিকভাবে পালন করেছি বলেই শেষ পর্যন্ত ভালো ফল পেয়েছি।’ সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর নাসার আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন মহাকাশের সদস্যরা।

আরও দায়িত্ব, আরও প্রত্যাশা

নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের সেরা দলগুলোকে পাঠানোর জন্য শুরুতে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)। দল বাছাই, প্রতিযোগীদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করা, মেন্টরশিপের ব্যবস্থা করাসহ পুরো কার্যক্রমেরই তত্ত্বাবধানে থাকে বেসিস। মনে করিয়ে দিই, ২০১৮ সালে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়েছিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দল-অলীক। ১০ বছরে দুবার সেরাদের মধ্যে জায়গা করে নিল বাংলাদেশ। সামনের দিনগুলোর জন্য কি দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল? জানতে চেয়েছিলাম নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ—বাংলাদেশের অন্যতম উপদেষ্টা আরিফুল হাসানের কাছে। তিনি বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতায় নাসা যেসব সমস্যা তুলে ধরে, সব কিন্তু মহাকাশসংক্রান্ত নয়। অনেক বৈশ্বিক কিংবা আঞ্চলিক সমস্যার কথাও থাকে। নাসা মূলত চায় অংশগ্রহণকারীরা যেন তাঁদের মেধা কাজে লাগিয়ে আঞ্চলিকভাবেও এসব সমস্যার সমাধান করতে পারে। এই লক্ষ্যে আগামী বছর থেকে আমরা কাজ করব। আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা থেকে উঠে আসা সেরা ৫০ দলকে নিয়ে এক্সিলারেশন প্রোগ্রাম হবে। পাশাপাশি আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন নাসার গবেষণা দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে, সে চেষ্টাও আমরা করব।’

সূত্র : প্রথম আলো

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
ছোট্ট একটি খামার থেকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট গড়েছেন দিনাজপুরের সামাদ – Ajker Valo Khobor
3 years ago

[…] আরও পড়ুন : নাসা স্পেস অ্যাপ্স চ্যালেঞ্জে চ্যাম্… […]

বাংলাদেশের ড. শেহলীনা আহমেদ পেলেন "অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার" খেতাব - Ajker Valo Khobor
2 years ago

[…] ★★নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে চ্যাম্প… […]