পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া উচিত, বললেন দেশটির সাবেক রাষ্ট্রদূত

ঢাকায় শেষ হওয়া দুই দিনের আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য দেন হোসেন হাক্কানি। ৫ নভেম্বরছবি: প্রথম আলো

পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক হোসেন হাক্কানি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে একাত্তরের অপকর্মের জন্য বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার দাবিকে সমর্থন করতেন।

রোববার ঢাকায় শেষ হওয়া দুই দিনের আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।

একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিত দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হোসেন হাক্কানি বলেন, ‘পাকিস্তানে আমার মতো অনেকে মনে করেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ওপর বিয়োগান্তক ঘটনা চাপিয়ে দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া উচিত। আমার ধারণা, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এই ধারণাকে তিনি সমর্থন করতেন। অতীতের ক্ষত এবং অপকর্ম সারাতে সামস্টিক ক্ষমার প্রতি যাদের বিশ্বাস রয়েছে, তাদের সবাই এটা সমর্থন করবে।’

হোসেন হাক্কানির মতে, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ন্যায়বিচার নিশ্চিতের পূর্বশর্ত। এটি ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করে হোসেন হাক্কানি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে আমি প্রথম দেখেছিলাম ১৪ বছর বয়সে। তিনি ১৯৭০ সালে জাতীয় নির্বাচনী প্রচার চালাতে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। করাচি ন্যাশনাল পার্কের জনসভায় পশ্চিম পাকিস্তান ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, অধিকার, গণতন্ত্র ও নায্যতার দাবিতে বঙ্গবন্ধু সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বঙ্গবন্ধু সমার্থক। মহাত্মা গান্ধী ও নেলসন ম্যান্ডেলার মতো তিনিও জীবনের এক–পঞ্চমাংশ কাটিয়েছেন কারাগারে। তাঁকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বলা হয়। আমি তো মনে করি, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা। সেক্যুলারিজিম বিশ্বাসী পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের নায়ক মনে করেন, শুধু বাংলাদেশের নয়।’

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হাডসন সেন্টারের পরিচালক হোসেন হাক্বানী বলেন, পারস্পরিক নির্ভরশীল বর্তমানে বিশ্বে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি সরকারের অঙ্গিকারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অনেকগুলো সংঘাত আর পুনরায় বৈশ্বিক মেরুকরণের ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ–পরবর্তী যে কাঠামো দাঁড়িয়েছিল, তা আজ ঝুঁকিতে পড়েছে। মানবজাতির অগ্রযাত্রা ও সমৃদ্ধির স্বার্থে শান্তি পূর্বশর্ত।

বাংলাদেশের অর্জন অন্য দেশগুলোর জন্য মডেল উল্লেখ করে তিনি বলেন, রক্তস্নাত যুদ্ধ ও গণহত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয়। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অন্য দেশগুলোর জন্য মডেল। আজ ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় আর্থসামাজিক নানা সূচকে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ যা অর্জন করেছে, তা স্বাধীনতার পর। এটি বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের প্রতি সম্মান।

হাডসন সেন্টারের পরিচালকের মতে, বাংলাদেশের অবশ্যই গণতন্ত্রের পথে থাকা উচিত। যেখানে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও রাজনৈতিক বহু মতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

সূত্র : প্রথম আলো

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
৪টি খাবার আপনাকে পেটের অসুখ থেকে ভালো রাখবে - Ajker Valo Khobor
2 years ago

[…] পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া … […]