মাদক সমস্যা: চোরাকারবারি চিহ্নিত করতে বিজিবির বিতর্কিত উদ্যোগ

বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামে মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণের জন্য বিতর্কিত এক উদ্যোগ নিয়েছে সীমান্ত-রক্ষী বাহিনী বিজিবি।

সীমান্তবর্তী কিছু বাড়িতে ‘মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি’ এবং ‘চোরাকারবারির বাড়ি’ সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে বিজিবির স্থানীয় সদস্যরা।

স্থানীয় বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সে এলাকায় চোরাচালান এবং নানাবিধ মাদক বাংলাদেশে ঢুকছে।

যাদের বাড়িতে এসব সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে চোরাচালান এবং মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে বলে বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। এছাড়া তারা বিভিন্ন সময় বিজিবির হাতে ধরাও পড়েছিল বলে বিজিবি বলছে।

তবে বাড়িতে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে স্থানীয় পুলিশ কিছু জানেনা।

মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেবার বিষয়টি তিনি সংবাদমাধ্যমে দেখেছেন।

তবে বিজিবির এই কর্মকাণ্ড এরই মধ্যে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।

মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, এভাবে কারো বাড়িতে ‘মাদক ব্যবসায়ী’ এবং ‘চোরাকারবারি’ সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়া মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

হবিগঞ্জের সাংবাদিক শাহ ফখরুজ্জমান বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, মাধবপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর, রামনগর এবং রাজেন্দ্রপুর গ্রামের ১০টি বাড়িতে এ ধরনের সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে।

তিনি বলেন, সেখানে ভারত থেকে নিম্নমানের চা পাতা এবং আরো নানা ধরণের পণ্য অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

এছাড়া সীমান্তের ফাঁক গলিয়ে গাঁজা, ফেনসিডিল ও নানা ধরণের মাদকদ্রব্য আসে বলে জানান সাংবাদিক ফখরুজ্জামান।

“আমাদের এখানে কোর্টে শতশত মাদকের মামলা। প্রায় প্রতিদিনই গ্রেফতার হচ্ছে। এজন্য মানুষকে সচেতন করার চেষ্টাও করেছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।”

যাদের বাড়িতে এ সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে তারা এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজী নন।

এছাড়া স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন সাংবাদিক ফখরুজ্জামান।

তিনি বলেন, “একটা বাড়িতে একজন লোক অপরাধ করতে পারে। কিন্তু সেই বাড়ির বা পরিবারের সবাই তো অপরাধী না।”

বিষয়টি নিয়ে বিজিবি হবিগঞ্জের ৫৫ ব্যাটালিয়নের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সাইনবোর্ড
ছবির ক্যাপশান,বিজিবির সদস্যরা এসে এসব সাইনবোর্ড লাগিয়ে যায়।

ঢাকায় বিজিবি সদর দপ্তরে যোগাযোগ করেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে একজন কর্মকর্তা বলেন, সীমান্ত এলাকায় এভাবে মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিদের চিহ্নিত করার কাজ এর আগেও করেছে বিজিবি।

এর আগে ২০১৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একই ধরণের কাজ করেছিল বিজিবি। মাদক কারবার, মানব পাচারের সাথে জড়িত কেউ বিজিবির হাতে আটক হওয়ার পর তাদের বাড়িতে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল।

মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলছেন, এভাবে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেবার আগে অভিযুক্ত ব্যক্তির আদালতে বিচার হবার আগেই তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে।

“আমরাও চাই অপরাধীরা শাস্তি পাক, মাদকের বিস্তার বন্ধ হোক। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় না। একটা আধুনিক, সভ্য, গণতান্ত্রিক সমাজে এটা হতে পারে না,” বলেন সুলতানা কামাল।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যদি প্রমাণিত না হয় তখন কী হবে? সে ক্ষতিপূরণ কিভাবে দেবে?”

“কোন ব্যক্তির যতক্ষণ পর্যন্ত বিচার সম্পন্ন না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করা যাবে না। “

সূত্র : বিবিসি বাংলা

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments