রোমাঞ্চকর জয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে নিউজিল্যান্ড

ম্যাচটা নাগালের বাইরেই চলে গিয়েছিল। ১৫ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ১০৭। ইংল্যান্ডের ১৬৬ রানের সংগ্রহটাকে দূরেরই মনে হচ্ছিল তখন। উইকেটে তখনো ছিলেন ড্যারিল মিচেল। জিমি নিশাম এলেন। ঝড় তুললেন। সেই ঝড়েই ঘুরে দাঁড়াল নিউজিল্যান্ড। দূর দিগন্তে থাকা লক্ষ্যমাত্রাটা কাছে টেনে এনেই দারুণ এক জয় তুলে নিল কিউইরা। ৫ উইকেটে জিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল পৌঁছে গেল নিউজিল্যান্ড।

মার্টিন গাপটিল ফিরে গিয়েছিলেন দ্রুতই। প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে, স্কোরবোর্ডে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ তখন মাত্র ৪। ফর্মে থাকা গাপটিলকে হারানোটা ছিল দলের জন্য বড় ধাক্কাই। কেইন উইলিয়ামসনও দলীয় ১৩ রানের মাথায় আউট। দুটি আঘাতই আসে পেসার ক্রিস ওকসের বল থেকে। ইংলিশরা তখন আকাশেই উড়ছিল। প্রথমে ব্যাটিং করে স্কোরবোর্ড তোলা ১৬৬ রানটাকে তখন নিউজিল্যান্ডের জন্য অনেক দূরের বিষয়ই হয়তো মনে করছিলেন অধিনায়ক এউইন মরগান। ক্রিস ওকসকে টানা ব্যবহার করলেন, সঙ্গে মার্ক উডকে। কিন্তু নিউজিল্যান্ড তখন স্বপ্ন দেখছে ঘুরে দাঁড়ানোর, সেটি গাপটিলের সঙ্গী ড্যারিল মিচেলের কল্যাণেই। উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ডেভন কনওয়েও তখন সঙ্গী তাঁর। এ দুজন, মাথায় ঠান্ডা করে স্কোরবোর্ডটাকে রাখলেন সচল। ইংল্যান্ডের মাথায় তখন বোলারদের ঠিকমতো ব্যবহার করা নিয়ে ভাবনা। ৬৭ বলে ৮২ রান তুলে এ জুটি যখন চোখ রাঙাচ্ছে, ঠিক তখনই মরগান তাসের দান ছাড়লেন লিয়াম লিভিংস্টোনকে আক্রমণে এনে। লিভিংস্টোন এসেই বাজিমাত করলেন। ফেরালেন কনওয়েকে, ৩৮ বলে ৪৬ রান করে তিনি যখন ফিরছেন, তখন তাঁর চেহারায় দলকে আরও কিছু দূর এগিয়ে দিয়ে আসতে না পারার আক্ষেপ। কিন্তু লিভিংস্টোন এখানেই থেমে গেলেন না। আউট করলেন গ্লেন ফিলিপসকেও। তাঁর বলে স্যাম বিলিংস যখন ফিলিপসের ক্যাচ নিলেন, তখন ম্যাচ আবারও ঘুরে গেছে ইংল্যান্ডের দিকে। ১৫ ওভারে ৪ উইকেটে ১০৭—ইংলিশরা জয়ের আশা সে সময় করতেই পারে।

কিন্তু ইংল্যান্ড খুব সম্ভবত ভুলে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড দলে জিমি নিশাম নামে একজন আছেন, তিনি খুব জোরে মারতে পারেন। মিচেলও তো একপ্রান্ত ধরে রেখেছিলেন। নিশাম উইকেটে এসেই শুরু করলেন তাণ্ডব—মাঠের চারদিকে তুলে তুলে মারতে লাগলেন তিনি। ১৭তম ওভারটি করতে এলেন ক্রিস জর্ডান। কিন্তু ওভারটা হলো বাজে—ইংলিশ দৃষ্টিকোণ থেকেই। ওয়াইড করলেন, বাজে জায়গায় বল ফেললেন। মিচেল আর নিশাম এ ওভার থেকে তুলে নিলেন ২৩ রান। স্বপ্নের মতো এক জয় তুলে নেওয়ার পথে তখন অনেক দূরই এগিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড। নিশাম মাত্র ১১ বলে খেললেন ২৭ রানের ইনিংস। সেটিতে ছিল একটি বাউন্ডারি, আর তিনটি বিশাল ছক্কা।

নিশামকে ইংল্যান্ড ফেরাল ঠিকই, কিন্তু ততক্ষণে কিছুটা দেরিই হয়তো হয়ে গেছে। ১৮তম ওভারে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ তখন ৫ উইকেটে ১৪৭। বাকি কাজটা সমাধা করতে হতো সেট ব্যাটসম্যান মিচেলকেই। সেটি তিনি দারুণভাবেই করলেন। শেষ পর্যন্ত ৪টি চার ও ৪টি ছক্কায় মিচেল করলেন ৪৭ বলে ৭২—একেবারে ম্যাচজয়ী ইনিংস। স্ট্রাইকরেট ছিল ১৫৩.১৯। এখানে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া নায়ক নিশামের স্ট্রাইকরেটের কথা না বললে খুব অন্যায় করা হবে—২৪৫.৪৫!

এই প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল নিউজিল্যান্ড। তবে ক্রিকেটের বিশ্ব আসরে এ নিয়ে টানা তৃতীয় ফাইনাল তাদের। ২০১৫ ও ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর এবারের টি-টোয়েন্টি ফাইনাল। দুই বছর আগে লর্ডসের হৃদয় বিদীর্ণ করা হার দেখেছিল তারা এই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই। আজ ইংল্যান্ডকে হারিয়েই সে ক্ষতে প্রলেপ দিল তারা। তবে টানা তৃতীয় ফাইনালে এসে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপটা খুব করেই পেতে চাইবে তারা। কিউইদের এই দলটার জন্য সেই গৌরবটা যে প্রাপ্যই। টেস্টের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা এবার সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও কি পারবে একটা গৌরব ঘরে নিতে?

সূত্র : প্রথম আলো

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments