লিখিত পরীক্ষায় উত্তর প্রদান ও খাতা উপস্থাপন কৌশল

আগামী নভেম্বরে শুরু হচ্ছে ৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা। সেই পরীক্ষার খাতায় উত্তর প্রদান ও খাতা উপস্থাপন কৌশল অত্যন্ত জরুরি। কীভাবে এই কৌশল নেবেন, তা নিয়ে এবারের আয়োজন।
লেখা:শাহ মো. সজীব।প্রশাসন ক্যাডার (২য় স্থান) ৩৪তম বিসিএস।প

লিখিত পরীক্ষার জন্য যে তথ্য আহরণ বা পড়াশোনা করেছেন, তার মূল লক্ষ্য হলো পরীক্ষার খাতায় চমৎকারভাবে উপস্থাপন করে আসা। আর এটি যদি করতে ব্যর্থ হন, তবে সব পরিশ্রম বৃথা যাবে। কারণ, পরীক্ষক আপনার জানার চেয়ে খাতায় কীভাবে উপস্থাপন করেছেন, তা দেখে নম্বর দেবেন। ছোটখাটো ভুল হয়তো আপনার পুরো স্বপ্নটাকে ব্যাহত করতে পারে। তাই তাঁকে সন্তুষ্ট করে আসা জরুরি। এ জন্য সতর্ক থাকতে হবে। অনেক তো পড়াশোনা হলো এবং ভালোই তথ্য আছে বা মাথায় নিয়েছেন। এবার সঠিকভাবে তা খাতায় দিয়ে আসতে হবে এবং খাতার অঙ্গসজ্জা ঠিকমতো করতে হবে। তবেই হবে পরিশ্রম শতভাগ সার্থক। এ নিয়ে এখন বলছি। নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ করতে পারেন।

ক) খাতায় কালো, নীল এবং ক্ষেত্রবিশেষে পেনসিল ছাড়া আর কোনো কালির দাগ থাকবে না। অনেকে সবুজ, বেগুনি, গোলাপি রং ব্যবহার করেন, যা ঠিক নয়।

খ) খাতাটি পেয়ে রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ তথ্যাদি পূরণ করে মার্জিন করে ফেলবেন। অবশ্যই বক্স স্কেলিং নয়। এটা পরীক্ষার খাতা; লেকের কোনো ওয়াকওয়ে নয়। কারণ, এতে লেখার জায়গাটা অনেক ছোট হয়ে আসে। ওপরে ও বাম পাশে এক ইঞ্চি রেখে দাগ। এই স্কেলিং করবেন নীল কালি দিয়ে।

গ) লুজ শিটে সময় না থাকলে মার্জিন করার প্রয়োজন নেই। শুধু ওপরে ও বামে ভাঁজ করে নিন।

ঘ) লুজ শিট নিলে তার নম্বরটি প্রথমেই মূল খাতার যথাস্থানে পূরণ করে নিন। পরে মনে থাকবে না।

ঙ) আপনার জীবনের সর্বোচ্চ গতিতে লিখবেন। লেখা যেদিক যায় যাক। শুধু বোঝা গেলেই হবে। দ্রুত লিখলে লেখা খারাপ হবে, এটাই স্বাভাবিক। চিন্তার কিছু নেই।

চ) পয়েন্ট, কোটেশন ও রেফারেন্স নীল কালি দিয়ে লিখবেন এবং নীল কালি দিয়ে আন্ডারলাইন করে দেবেন। এতে পরীক্ষক সহজে চোখে দেখবেন। তাঁকে দেখানোই আপনার কাজ।বিজ্ঞাপন

ছ) সব প্রশ্নের উত্তর করে আসবেন। সময় না থাকলে কম লিখবেন। না পারলে আন্দাজে কিছু একটা লিখবেন।

জ) চেষ্টা করবেন প্রশ্নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে উত্তর দিতে। এতে খাতা দেখা সহজ হয়। তাই পরীক্ষক খুশি। আর সে খুশি হলে নম্বর ভালো আসবে।

ঝ) তবে টু দ্য পয়েন্টের উত্তরগুলো আগে দেওয়াও ভালো। যেমন ব্যাকরণের উত্তর, চিঠিপত্র, ছোট প্রশ্ন, টীকা। তারপর বর্ণনামূলক লেখা ভালো।

ঞ) অসম্পূর্ণ উত্তরের ক্ষেত্রে বাংলার বেলায় অ. পৃ. দ্র. এবং ইংরেজির বেলায় To be continued লেখা উত্তম।

ট) নতুন প্রশ্ন নতুন পৃষ্ঠা থেকে শুরু করা ভালো। তবে গুচ্ছ প্রশ্নের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না।

ঠ) বিজ্ঞান ছাড়া অন্য বিষয়ে চিত্রের প্রয়োজন নেই। এখানে তথ্যের দরকার। এটিই দিন। তবে উত্তরের প্রয়োজনে ম্যাপ এঁকে দিতে পারেন।

ড) চিঠিপত্র লেখার সময় বাম পাশের পৃষ্ঠা থেকে শুরু করা উত্তম এবং দুই পৃষ্ঠায় শেষ করে দেবেন।

ঢ) মার্জিনের বাইরে কোনো লেখা হবে না। প্রশ্নের নম্বর ও কত নং প্রশ্নের উত্তর লিখছেন, তা–ও লেখা যাবে না। এমনকি একটা ফুলস্টপও হবে না। বোঝা গেল নিশ্চয়ই।

ণ) অনাবশ্যকভাবে পৃষ্ঠা ভরবেন না। পৃষ্ঠা গুনে নম্বর হয় না। যা চেয়েছে ও যা জানেন, তা সময়ের সঙ্গে মিল রেখে লিখুন।

ত) যথাসম্ভব কাটাকাটি করবেন না। এতে খাতার সৌন্দর্য নষ্ট হয়। সুন্দর জিনিসের দাম সর্বত্রই আছে। তার মানে এই নয়, লেখা বাদ দিয়ে নকশা করবেন। বুঝতে পেরেছেন আশা করি।

থ) টীকা লেখার সময় প্রথমে হালকা ভূমিকার মতো থাকবে এবং শেষে একটা সমাপনী থাকবে। মাঝখানে যা জানতে চেয়েছে, তা অল্প করে লিখে দেবেন।

দ) যেসব প্রশ্নের উত্তরের ক্ষেত্রে শব্দ নির্ধারিত থাকবে, তা কোনোভাবেই অতিক্রম করা যাবে না। যেমন ইংরেজি রচনা। এ জন্য পরীক্ষার হলে গুনতে বসবেন না। বাসায় এক পৃষ্ঠা দ্রুত লিখে দেখবেন কত শব্দ হয়। সেই সংখ্যা দিয়ে নির্ধারিত সংখ্যাকে ভাগ দিলে পৃষ্ঠা পেয়ে যাবেন। তবে সামান্য বেশি হলে তেমন সমস্যা নেই।

ধ) ৫ নম্বরের একটা প্রশ্নের উত্তর সর্বোচ্চ ২ পৃষ্ঠা হতে পারে। এর বেশি অনেক ক্ষেত্রেই সময় পাবেন না।

ন) এককথায় যেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, তা যত সংক্ষেপে লেখা যায়। এখানে প্যাঁচালেই বিপদ।

প) ইংরেজি ও বাংলা রচনা শেষে লেখাই উত্তম। কারণ, তা সর্বাধিক নম্বর বহন করে।

ফ) শূন্যস্থান পূরণের ক্ষেত্রে যদি নম্বর না থেকে প্যাসেজ থাকে, তবে পুরোটা তুলতে হবে। আর শূন্যস্থানের নিচে নীল কালি দিয়ে আন্ডারলাইন করে দিতে হবে, যাতে পরীক্ষকের সহজে চোখে পড়ে।

ব) লেখার সময় বানান ভুল হচ্ছে কি না মাথায় রাখবেন। যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাবেন। সিনিয়র স্যাররা এতে খুব বিরক্ত হন।

ভ) যেকোনো চিত্র পেনসিল দিয়ে আঁকবেন। ফ্রিহ্যান্ডে আঁকাই উত্তম। তবে জ্যামিতির চিত্র আঁকার সময় স্কেল ধরবেন।

ম) বর্ণনামূলক প্রশ্নে পারলে ছক দিয়ে তথ্য উপস্থাপন করবেন। ছকটা তৈরি করবেন নীল কালিতে আর লিখবেন কাল কালিতে। এতে পরীক্ষক সহজে বুঝতে পারবেন।

য) জেল জাতীয় কালির কলম ব্যবহার না করাই উত্তম। এতে অন্য পৃষ্ঠাও নষ্ট হয়ে যায়। বলপয়েন্ট কলমই ভালো।

র) ভুলক্রমে যদি কোনো পৃষ্ঠা রেখে পরবর্তী পৃষ্ঠায় লিখে ফেলেন, তবে ফাঁকা পৃষ্ঠায় একটা দাগ টেনে দেবেন।

ল) প্রতিটা নম্বরের জন্য কত সময় পান, তা পূর্বেই হিসাব করে রাখবেন এবং সেই পরিমাণ সময় তাতে ব্যয় করবেন। যদি বরাদ্দকৃত সময় কিছু বেঁচে যায়, তবে তা পরবর্তী কোনো প্রশ্নে ব্যবহার করতে পারেন।

শ) সাধারণ গণিতে উত্তর শেষ হলে একটু রিভিশন দেবেন। অনেকেরই প্লাস মাইনাস বা ছোটখাটো ভুল করার অভ্যাস আছে।

ষ) উত্তর প্রদানের জন্য পার্শ্ববর্তী কোনো পরীক্ষার্থীর ওপর নির্ভর করবেন না। এটা নিয়ম ও নৈতিকতাবিবর্জিত।

স) প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর লেখা শুরু করার আগে কয়েক সেকেন্ড ভেবে উত্তরকাঠামো কী হবে ঠিক করে নেবেন। এতে সাজানো উত্তর আসবে। এটাকে সময় অপচয় বলে না।

হ) অনেক সময় কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। তা যেন বাদ রাখা না হয়। যেমন নিচের ৬ নং প্রশ্নসহ ১০টি প্রশ্নের উত্তর দিন। অর্থ হলো, ৬ নং দিতেই হবে। মোদ্দা কথা, প্রশ্নের নির্দেশনা ভালো করে বুঝতে হবে।

ড়) বাংলায় লিখিত উত্তরের ক্ষেত্রে Answer to the question no. 1 লেখার প্রয়োজন নেই। ‘১নং প্রশ্নের উত্তর’ লিখুন।

একটা কথা মনে রাখবেন, এমন কোনো কাজ খাতায় করে আসবেন না বা এমন কিছু লিখবেন না কিংবা এমন প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করবেন না, যাতে পরীক্ষকের মাথা গরম হয় বা তিনি বিরক্ত হন। কারণ, তিনি খেপে গেলে আপনাকে বিদায় নিতে হতে পারে। তাই সতর্ক থাকুন এবং পড়াশোনা করুন। আগামী ২৯ নভেম্বর ২০২১ থেকে শুরু হওয়া লিখিত পরীক্ষায় আপনি সফল হোন। সবার জন্য শুভকামনা। ধন্যবাদ সবাইকে।

সূত্র : প্রথম আলো

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments