যেভাবে ডুবলো ফেরি আমানত শাহ, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা

ফেরির ভিতরে ছিল, ভাঙ্গা উপজেলার শুয়াদি গ্রামের হাফিজুল (৪৫) বরগুনা পাথর ঘাটার ইসমাইল, শিবচর ডাইয়াচর এলাকার লোকমান মৃধা। তারা বর্ণনা দিলেন কিভাবে ফেরি আমানত শাহ ডুবে গেল। এরা মোটরসাইকেলযোগে উল্লেখিত এলাকা থেকে ঢাকা ও মানিকগঞ্জ ফিরছিল ভাড়ার গাড়িতে। ফেরিটি ঘাটে ভিড়তে মাত্র ১০ মিনিট বাকি। ফেরিও স্লো ছিল। কিন্ত ফেরির মধ্যে হুহু করে পানির ঢোকার বিষয়টি ফেরির লোকের কেউ জানেনি। বুঝে উঠার আগেই ঘটে গেল দুর্ঘটনা।

ঘাট প্লাটুনে দাঁড়ানে কিছু স্থানীয় এবং যাত্রী চিৎকার করে ফেরির মাষ্টারকে বলতে থাকেন ফেরিতে পানি ঢুকতেছে ডুবে গেল। এমন আওয়াজ শুনে কেউ কেউ ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন। তাৎক্ষণিক বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে ফেরি অভ্যন্তরে। যে যার মত বাঁচার জন্যও কিনারে উঠার চেষ্টা চালান। অর্ধেক ডুবন্ত ফেরি ঘাটে ভিড়েই সামনের ঢালা ফেলে দিলে ২/৩ টা কার্গো ও ২ টা মটর সাইকেল কিনারে উঠে পড়লেও ৪/৫ টি মোটরসাইকেল বাকি ১৭/১৮ টি মাল বোঝাই গাড়ি সহ ফেরি ডুবে যায়।

ঘাটের কাছে এসে কাত হয়ে অর্ধেক নিমজ্জিত অবস্থায় থাকা ফেরি আমানত শাহকে তুলতে উদ্ধারকারী নৌযান হামজা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। ভেতরে কেউ আটকা পড়ে থাকলে তাদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা তল্লাশি চালাচ্ছেন। তবে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

আতিকুর রহমান (৩৫) যশোরের দড়াটানার মোড়ের এক ব্যক্তি সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে ফরিদপুর থেকে দৌলতদিয়ায় এসে ফেরি শাহ আমানতে উঠেছিলেন নদী পার হওয়ার জন্য। ফেরি উল্টে যাওয়ার সময় তিনি কোনোক্রমে উদ্ধার পেলেও মোটরসাইকেলটি রক্ষা করতে পারেনি। ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ফেরিতে বেশিরভাগ ছিল ট্রাক আর কাভার্ডভ্যান। মোটরসাইকেল নিয়ে ছিলেম তারা ৫-৭জন। ফেরি ঘাটের কাছে আসার পর শ্রমিকরা চিৎকার শুরু করে যে- ফেরিতে পানি ঢুকছে, পানি ঢুকছে।

তখন নিজেও ফেরিতে পানি উঠতে দেখেন জানিয়ে আতিকুর বলেন, আমি তাকিয়ে দেখি আস্তে আস্তে ফেরিটা ডান দিকে কাত হচ্ছে। সবাই চিন্তা করছি ফেরি কখন দাঁড়াবে। কিন্তু যখনই দাঁড়াতে গেছে, তখন আরো কাত হয়ে গেছে। ফেরি ঘাটে ভেড়ার পর দুইটা তিনটি গাড়ি সম্ভবত পার হয়েছে। তাদের সামনে একটা মোটরসাইকেল ছিল। তিনি দেখলেন সেই মোটরসাইকেল অলরেডি ট্রাকের নিচে চলে গেছে। চালক কোনোমতে গিয়ে পার হয়ে চলে আসেন। তিনি মোটরসাইকেল ছেড়ে দিতেই ডুবে গেল। সেও ডুবে যায়। পরে জুতা খুলে সাঁতার কেটে একটা কাভার্ডভ্যানের উপরে উঠে জীবন বাঁচান।

এরপর কেউ একজন আতিকুরকে একটা দড়ি দেয়। কিন্তু দড়ি ধরে পার হতে পারিনি। পরে একটা চেইন ঝুলতে দেখে সেটা ধরে পার হন। শেষে ৫-৭ জন যাত্রী তারা টেনে পারে তোলেন।

আবুল হোসেন আরেক যাত্রী জানান, তার বাড়ি যশোর সদরের পালপড়া। তিনিও মোটরসাইকেল নিয়ে দৌলতদিয়া থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। ঘাটে পৌঁছানোর আগে আগে ফেরিতে পানি উঠতে শুরু করে জানিয়ে আবুল হোসেন বলেন, ফেরি ঘাটে লাগার পর কয়েকটা পিকআপ নেমে যায়। কিন্তু তার মোটরসাইকেলটা নদীতে পড়ে যায়। তিনি লাফ দিয়ে সাঁতরে তীরে উঠেন।

শিবালয় থানার ওসি ফিরোজ কবির বলেছেন, ফেরির নিচে যে ডাম্প (ফাঁকা অংশ) থাকে, সেখানে ফুটো হয়ে পানি ঢোকায় নৌযানটি উল্টো যায় বলে ধারণা করছেন।

দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে মানিকগঞ্জের ডিসি মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ সাহেব গণমাধ্যম কে জানিয়েছেন।

এ বিষয় ফেরি বিভাগ ও মাষ্টার এসোসিয়েশন এর নেতা, মাষ্টার সায়েম বলেন বিষটি একটা দুর্ঘটনা। শুকরিয়া যে, কোন যাত্রী মারা যাননি।

সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments