
কোনটা বেশি উপভোগ করেন বাংলাদেশের ক্রিকেটার শেখ মেহেদি হাসান – ব্যাটিং না বোলিং? প্রশ্ন রাখতেই হেসে দিয়ে বললেন, “যখন যেটায় ভালো করি, সেটাই।”
মেহেদি হাসানকে দলে নেয়া হয়েছে বিশেষ একটি কারণে – তিনি একজন খেলোয়াড়, যাকে চিহ্নিত করা হয় “মিনি অলরাউন্ডার প্যাকেজ” হিসেবে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আর্বিভাবের পর অনেক ক্রিকেটারই এমন একটি ভূমিকা পালন করেন যে দলের প্রয়োজনে অধিনায়ক যা চান, ম্যাচে তিনি তেমন দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন।
নির্বাচকরা মনে করেন, মেহেদি হাসান একজন সাহসী ক্রিকেটার।
এই ধরনের ক্রিকেটারকে “ইউটিলিটি ক্রিকেটার”-ও বলা হয়। বিশ ওভারের ম্যাচে এরা খেরার মোড় বদলে দেয়ার কাজ করে থাকেন – কারণ এখানে অনেক সময় ১২০ বলের মধ্যে ১১০ বল খারাপ খেললেও শেষ ১০ বল ভালো খেলে ম্যাচের গতি-প্রকৃতি বদলে দিতে পারেন ব্যাটসম্যান বা বোলার।
তাদের কোনও বিশেষায়িত ভূমিকা থাকবে না, আবার সব সেক্টরেই অবদান থাকতে হবে।
কেন সুনীল নারাইনের সাথে তুলনা
শেখ মেহেদি হাসানের সঙ্গে তুলনা করা হয় সুনীল নারাইনের – ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই খেলোয়াড় ওপেনিং থেকে শুরু করে আট নম্বর এই সব পজিশনেই ব্যাট করতে পারেন। গতকাল সোমবারও কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে তিনটি ছক্কা হাকিয়ে দলের রানের চাকা সচল রাখেন সুনীল নারাইন।
হাসানকে এই কারণেই এমন ভূমিকায় চায় বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট।
যেমন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে প্রথমে বল করতে নেমেই উইকেট নিয়ে মেহেদি খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন।
বিবিসি বাংলাকে তিনি জানালেন, সবসময়েই দায়িত্ব নেয়া বা চাপ নিয়ে খেলতে পছন্দ করেন তিনি। “প্রথম ওভারে বল করা আনন্দের। আর উইকেট পাওয়া আরও বড় আনন্দের। তবে আমি চেষ্টা করি ব্যাটসম্যানকে চাপে রাখার।”
ব্যাটসম্যানের সাথে মানসিক লড়াই বেশ উপভোগ করেন মেহেদি হাসান। তিনি বলেন, “প্রথম ছয় ওভারে ব্যাটসম্যানরা চায় উড়িয়ে মারতে, এই সময়ে ডট বল দেয়ার মধ্যে তৃপ্তি আছে। ডট বল দিলেই অটো উইকেট আসে।”
ছয় ওভারের পরে যখন পাঁচজন ফিল্ডার নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে থাকে তখন ব্যাটসম্যানদের চাপ কমে যায়, তাই প্রথম ছয় ওভারেই বাড়তি সুবিধা নেয়ার পক্ষে তিনি।
বল পেটাতে পারেন যেকোনও সময়
তার বোলিং বুদ্ধিদীপ্ত ও তীক্ষ্ম, তবে মেহেদি হাসান উপভোগ করেন ব্যাট করা – বিশেষত যখন টপ অর্ডারে তাকে পাঠিয়ে বল পেটানোর ‘লাইসেন্স’ দেয়া হয়।
“বাংলাদেশ দলে খেলা সৌভাগ্যের বিষয়। এখানে আসলে নিজের চাওয়া বা না চাওয়া নেই। মোটামোটি ব্যাটিং পারি, তাই যে কোনও পজিশনেই আমি ব্যাট করতে রাজি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ের সুযোগটা কম আসে। যখন যেটার সুযোগ থাকে, সেটাই চেষ্টা করি।”
লং রেঞ্জ শটে তিনি বেশ ভালো, এটা তিনি ঘরোয়া টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রমাণ করেছেন। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে এখনও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি তিনি।
তবে তিনি মনে করেন যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একটা ইনিংসই সব বদলে দিতে পারে। “মানুষের একটা সুযোগের ব্যবহারই তার ক্যারিয়ার বদলে দিতে পারে।”
মেহেদি হাসান মনে করেন, তিনি যে ধরনের ক্রিকেটার তাতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দলে ভূমিকা রাখতে পারবেন।

মেহেদির জাতীয় দলে ঢোকার কারণ
মেহেদি হাসানকে দলে নেয়া হয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে দ্রুত গতিতে রান তোলার রেকর্ড দেখে। ঢাকা প্লাটুনের হয়ে ২৫৩ রান তুলেছেন, আর ১২টি উইকেট নিয়েছেন শেষ আসরে।
এর আগে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে যথাক্রমে ১০ ও ১৩টি উইকেট নিয়ে আলোচনায় ছিলেন।
কিন্তু বাংলাদেশ দলে শুধু স্পিনার হিসেবে দলে ঢুকতে বেশ প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়। একে তো নবাগত নাসুম আহমেদ আছেন, এর আগে ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ – সাথে আছেন নিয়মিত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।
কিন্তু শেখ মেহেদি হাসান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে ঝড়ো গতিতে রান তোলার কিছু প্রমাণ রেখেই দলে ঢুকে পড়েন দ্রুত – এরপর খুলনা বিভাগের ব্যাচমেট ও টিমমেট মেহেদী হাসান মিরাজকে পেছনে ফেলে তিনিই হয়ে যান বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের নিয়মিত সদস্য।
দ্রুত রান তোলা, নিয়মিত উইকেট এনে দেয়ার সাথে চটপটে ফিল্ডিং – এই তিন গুণের অধিকারী মেহেদি হাসানকে মনে করা হয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যথাযথ প্যাকেজ। বিশ্বকাপের মঞ্চটা, তার ভাষ্যমতে, নিজেকে প্রমাণ করার জন্য ‘আসল জায়গা’।
সূত্র : বিবিসি বাংলা