এখন সংসার চালানোই দায় | প্রথম আলো

অথচ এখন সরকারের চাল ও নিত্যপণ্য বিক্রির ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রের সামনে সীমিত আয়ের মানুষের ভিড় সাম্প্রতিক কালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এর চেয়ে বেশি ভিড় দেখা যেত বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর কাজীপাড়ার এক আসবাব ব্যবসায়ী জানান, তিনি এখন সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকের অপেক্ষায় থাকেন। কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও তেল-চিনি কিনে বাসায় ফেরেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সবকিছুর দাম এখন চড়া। বাজারে এক কেজি চালের দাম ৬০ টাকা। এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৫০ টাকা। কিছুদিন আগেও এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১২০ টাকায় কেনা যেত, এখন সেটা ১৭৫ টাকা। তিনি বলেন, দুই বছর ধরে ব্যবসার অবস্থা ভালো নয়। এর মধ্যে সংসারের ব্যয় বাড়ছেই।

করোনাকালে দাম কতটা বাড়ল

দেশে গত বছরের ৮ মার্চ করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। তখন থেকে শুরু হয় আতঙ্কের কেনাকাটা, যাকে বলা হয় ‘প্যানিক বায়িং’। বাড়তে থাকে দাম।

টিসিবির ২০২০ সালের ১ মার্চ ও গত বৃহস্পতিবারের বাজারদরের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সে সময়ের তুলনায় এখন মোটা চালের গড় দাম সাড়ে ৩১ শতাংশ, খোলা আটার ২০, খোলা ময়দার ৩৩, এক লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ৪৩, চিনির ১৯, মোটা দানার মসুর ডাল ৩০ ও গুঁড়া দুধের ১৩ শতাংশ বেশি।

ভোজ্যতেলের উদাহরণটি দেওয়া যাক। পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারে মোটামুটি পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল প্রয়োজন হয়। গত বছর অক্টোবরে এই পরিমাণ তেলের দাম ছিল ৫০৫ টাকা। এখন তা কিনতে ৭০০ টাকা লাগে। বোতলের গায়ে মুদ্রিত দর ব্র্যান্ডভেদে ৭২৮ থেকে ৭৪৮ টাকা। ফলে দেখা যাচ্ছে, একটি পরিবারে মাসে ২০০ টাকার মতো বাড়তি লাগছে শুধু ভোজ্যতেল কিনতেই।

বাজারে দুই সপ্তাহে বেড়েছে পেঁয়াজ, মসুর ডাল, ব্রয়লার মুরগি, ডিম ও সবজির দাম। পেঁয়াজের দাম মোটামুটি দ্বিগুণ হয়ে গেছে। যে দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজিতে কেনা যেত, তা কিনতে এখন ৮০ টাকা লাগছে। কোনো উৎসব বা উপলক্ষ নেই, তবু ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ টাকা ছুঁয়েছে, যা সাধারণত ১২০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে থাকে।

এ বছর ইলিশের দামও কমেনি বললেই চলে। ৪ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরা বন্ধ হওয়ার পর বাজারে অন্য মাছের কদর বেড়েছে, দাম চড়া। সবজি রান্নার জন্য সামান্য ছোট চিংড়ি কিনতে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৫৫০ টাকা। অবশ্য সবজি কেনার জো কই! বেশির ভাগের প্রতি কেজির দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

শুধু যে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, তা নয়। বেড়েছে নিত্যব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্যের দাম। যেমন মাস তিনেক আগে বাজারে সুপরিচিত একটি ব্র্যান্ডের ১০০ গ্রাম ওজনের একটি সাবানের দাম ছিল ৩৫ টাকা। সেটা এখন ৪০ টাকায় বিক্রি করছে তারা। বেড়েছে ডিটারজেন্ট, টুথপেস্ট, নারকেল তেল, শৌচাগারে ব্যবহার করা টিস্যুসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। সুপরিচিত আরেকটি ব্র্যান্ডের এক প্যাকেট টিস্যুর দাম ছিল ১৭ টাকা, যা এখন ২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। মানে হলো, টিস্যুর পেছনে একটি পরিবারের মাসিক ব্যয় ১৮ শতাংশ বেড়ে গেছে।

Source link

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments