কুষ্টিয়ায় গুলি করে হত্যা, লাশ নিয়ে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর মহাসড়ক অবরোধ

 কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:  কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ভাদালিয়া এলাকার দরবেশপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বক্কর-দাউদ বাহিনীর গুলিতে রাজু আহম্মেদ (৪২) নামে এক ব্যাক্তি নিহত হয়েছে। নিহত রাজু আহম্মেদ দরবেশপুর গ্রামের মুন্তা মন্ডলের ছেলে। বৃহস্পতিবার আনুমানিক রাত ১ টার সময় এই ঘটনা ঘটে। নিহত রাজু আহম্মেদ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।

 

 

এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে ভাদালিয়া দরবেশপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে কোন্দল চলে আসছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় এই ঘটনা ঘটে। বারবার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বক্কর-দাউদ বাহিনী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাট সহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটালেও পুলিশ প্রশাসন এদেরকে দমন করে জনজীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। বক্কর-দাউদ বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।

 

নিহতের ভাই শাহীন আলম জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে প্রতিদিনের মত তারা সবাই বাসায় ঘুমিয়ে ছিলো। হঠাৎ করে আনুমানিক রাত সাড়ে বারোটার দিকে ক্যাম্প পুলিশ তাদের বাড়িতে এসে তাদেরকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলে। সবাই বের হয়ে মাঠে চলে গেলেও রাজু বাড়িতে একা ঘুমিয়ে ছিল। এর কিছুক্ষণ পরই বক্কর, দাউদ মণ্ডল সহ তার সন্ত্রাসী বাহিনী সম্পূর্ণ বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং রাজুকে তার ঘর থেকে বের করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি করে ও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে।

 

 

বিষয়টি শোনার পর নিহতের ছোট ভাই ও পরিবারের লোকজন উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসতে গেলে ক্যাম্প পুলিশের এএসআই ওবায়দুল তাদেরকে বাধা প্রদান করে এবং লাঠি দিয়ে মারধরও করে। পুলিশি বাধা অতিক্রম করে রাজুর ভাই ও পরিবারের বেশ কয়েকজন ছুটে এসে রাজুকে গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখতে পাই। ঐ অবস্থায় রাজুকে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। এই হত্যার জন্য পুলিশই দায়ী।

 

 

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাব্বিরুল আলম বলেন, কয়েক মাস ধরে দরবেশপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় মামুন ও বক্কর গ্রুপের মধ্যে কোন্দল চলে আসছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারই ধারাবাহিকতায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। রাজু আহম্মেদ মামুন গ্রুপের সমর্থক। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। নতুন করে সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। থানায় হত্যা মামলা নেওয়া হচ্ছে।

 

 

“নিহতের পরিবারের দাবি স্থানীয় ক্যাম্পের এএসআই ওবায়দুল হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত” বিষয়টি নিয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি বিষয়টি শুনেছি। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শুক্রবার দুপুরের পরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর লাশ নিয়ে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের ভাদালিয়া বাজারে পৌঁছালে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এ্যাম্বুলেন্স থেকে লাশ নামিয়ে নিয়ে বিচারের দাবীতে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এসময় এলাকার কয়েক হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি অপারেশন আকিবের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীদের ন্যায্য বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় পুলিশ। এরপর এলাকাবাসীরা মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে লাশ নিয়ে মিছিল করতে করতে গ্রামের দিকে চলে যায়।

 

 

মহাসড়ক অবরোধ করে রাখার কারণে মহাসড়কের দুই পাশে কয়েকশ যানবাহন অচলাবস্থায় প্রায় ঘন্টাখানেক আটকে পড়ে থাকে। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীরা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বক্কর, দাউদ মন্ডল সহ সকলকে দ্রুত আটক করা এবং এএসআই ওবায়দুলের প্রত্যাহার ও কঠিন শাস্তি দাবি করেন।

Source link

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments