সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড: একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত সঙ্গীত পরিচালক ইমন সাহা। ইমন সাহার কথা বলার আগে বলতে হয় সত্য সাহার কথা। ইমন সাহার বাবা সত্য সাহা বাংলার সুর ও সঙ্গীত জগতে একটি অবিস্মরণীয় নাম।
আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী সাথী মোদের ফুলপরী,ফুলপরী লালপরী লালপরী নীলপরী সবার সাথে ভাব করি। কিংম্বা ও মাস্টার সাব আমি নাম দস্তখত শিখতে চাই কোনদিন কেউ যেন বলতে না পারে তোমার ছাত্রের বুদ্ধি নাই। অথবা আমি যে আঁধারে বন্দিনী। আবার তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়। কালজয়ী এমন অসংখ্য গানের স্রষ্টা সত্য সাহা। এই বিস্ময়কর প্রতিভার কনিষ্ঠ সন্তান ইমন সাহা। যাঁর ধমনিতে প্রবাহিত হচ্ছে সুরস্রষ্টা পিতার বিশুদ্ধ রক্ত। সত্যদার মতই পরিপূর্ণ একজন বিনয়ী মানুষ ইমন সাহা।

ছবি : সংগ্রহ
সত্যদার সাথে আমার কাজের সুযোগ হয়েছিল, ১৯৯৭ সালে তিনি আমার ‘চাঁদনী গড়ে কয়েকদিন’ নাটকের মিউজিক করেছিলেন। সেদিন যে অমায়িক সঙ্গীত মাস্টার সত্যদাকে দেখেছিলাম তাঁরই হুবাহু প্রতিচ্ছবি দেখলাম ইমন সাহার মাঝে যখন সে বাবার সুযোগ্য উত্তরসূরি হয়ে এলো আমার নাটক এবং সিনেমার সঙ্গীত জগতে। সঙ্গীতে খুব অল্প বয়সেই সুখ্যাতি অর্জন করেন ইমন। নতুন নতুন সৃষ্টিতে রয়েছে তাঁর অদম্য আগ্রহ। সঙ্গীতে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য ছুটে গেছেন এ আর রাহমানের কাছে সেখানে শিক্ষা জীবন শেষ করে আরো উচ্চতর শিক্ষা লাভের জন্য এখন তিনি অবস্হান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে। ২০০০ সালে আমার সন্ধ্যালোকে যাত্রা নাটকটি দিয়ে ইমনের সাথে আমার প্রথম কাজের সূচনা হয়। স্টুডিওতে সেদিন অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম এই ছেলেটির মুখের দিকে যখন সে কিরনের লাশ বহন করা গরুগাড়ির চাকার কুঁকা শব্দ ও তার সাথে গরুর গলায় বাধা ঘন্টার টুংটাং আওয়াজের সংমিশ্রণে মর্মান্তিক এক আবেগঘন আবহাওয়া তৈরিতে নিমগ্ন হয়েছিল। সন্ধ্যালোকের শেষ দৃশ্যে মৃত কিরনের শেষ যাত্রায় পর্দায় যে অবস্হার সৃষ্টি ইমন করেছিলেন তা আজও আমার হৃদয়ের মনিকোঠায় ধ্বনিত হয়।
সন্ধ্যালোকে যাত্রার পর অন্তর্দাহ। ধর্মান্তরিত সন্তানের জন্য সন্তান হারা অসহায় মায়ের আর্তনাদ। একদিকে ওয়াহিদা মল্লিক জলি ও জয়ন্ত চট্রোপাধ্যায়ের বক্ষ খামচে ধরা অসাধারণ অভিনয় আরেকদিকে দুটি মানুষের অশ্রুসিক্ত চিত্র গ্রহণ যেনো আরো- আরো হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠেছিল- আমার অন্তরজালা জুড়াইল চিতার অনলে বিধি চিতার অনলে…অসাধারণ সুর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে অন্তর্দাহ নাটকটিকে ইমন এমন এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিল যা লিখে বোঝান যাবেনা।
এরপর ডজন ডজন নাটক পেরিয়ে সিনেমা ‘নাচোলের রাণী’। নাচোলের রাণী থেকে গঙ্গাযাত্রা হয়ে অন্তর্ধান অতপর রোহিঙ্গা নিয়ে সঙ্গীতের কিযে খেলা ইমন খেলেছেন ভাবতে অবাক লাগে! যখনই ইমনের কোনো সৃষ্টি কান পেতে শুনি তখনই আমার কাছে মনে হয় ইমন সাহা বাংলার অনন্য এক প্রতিভার নাম।
লেখক : সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড- নাট্য ও চলচ্চিত্র পরিচালক