মোঃ শহিদুল্লাহ: আজ মানবতার ইতিহাসের কলঙ্কময় দিন হিরোশিমা দিবস। আজ থেকে ঠিক ৭৫ বছর আগে ১৯৪৫ সালের এই দিনে জাপানের হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা ছুড়েছিল পৃথিবী শাসনকরা পরশক্তি আমেরিকা ৷
সৃষ্টির সেরা সভ্য জীব মানুষ। কিন্তু সারা বিশ্বে যুগে যুগে এই মানুষই এমন অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে যা মানুষের মনুষত্ব আর মানবতাবোধকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ আর মানব সভ্যতার মুখে একে দিয়েছে কলঙ্কের কালিমা। মানব সভ্যতার ইতিহাসে ৬ আগস্ট এক রক্তঝরা দিন। ১৯৪৫ সালের এই দিনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যখন শেষ পর্যায়ে ঠিক তখনই মার্কিন বাহিনী জাপানের হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমার হামলা চালায়।
হিরোশিমা শহরে স্থানীয় সময় তখন সকাল আটটা ১৫ মিনিট জাপানের হিরোসিমা শহরে এই ঘটনা ঘটে।এ বিষয়ে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান পূর্ব নির্দেশ ছিল।কথামতো মার্কিন বি-টুয়েন্টি নাইন বোমারু বিমান এনোলা গে থেকে হিরোশিমায় ফেলা হলো আণবিক বোমা ‘লিটল বয়থ। বোমাটি প্রায় ৫০০ মিটার উঁচুতে থাকতেই বিস্ফোরিত হয়।
ওই পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণে ঘুমের মধ্যে থাকা প্রায় দেড় লাখ নিরিহ মানুষ চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে গেলেন৷ মাটির সঙ্গে মিশে স্বপ্নের বসতবাড়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নান্দনিক সব ¯হাপনা৷ নয়নাভিরাম একটি স্বপ্নের শহর মুহূর্তে পরিণত হল প্রেতপুরীতে৷ শুধু তাই নয় এই পারমাণবিক হামলার পার্শ^প্রতিক্রিয়ায় বছর শেষে আরও ৬০ হাজার মানুষের প্রাণ অকালেই ঝরে পড়লো৷
আবার এর তিন দিন পরে ৯ আগস্ট নাগাসাকি শহরেও ফ্যাটম্যান নামে আরকেটি পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হয়ে। না ফেরার দেশে চলে গেলো প্রায় ৭৪ হাজার মানুষ৷ পারমানবিক বোমার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগের কারনে দুই শহরে চার লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
আণবিক বোমা হামলার এতো বছর পরও শহর দুটোতে জন্ম নিচ্ছে বিকলাঙ্গ শিশু। ক্যান্সারসহ দুরারোগ্য রোগে ভুগছে বহু মানুষ।
কলঙ্কজনক হিরোশিমা হামলার ৭৫তম বার্ষিকী আজ। প্রতিবছর এই দিবসটিতে জাপান সরকার ও বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে। বিশ্বের অন্যন্য দেশেও শান্তিপ্রিয় মানুষ নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে দিবসটি সে ভাবে আর পালিত হচ্ছে না।
জাপানের আত্মসমর্পণের পেছনে এ বোমার ভ‚মিকা এবং এর প্রতিক্রিয়া ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে অধিকাংশের ধারণা, এ বোমাবর্ষণের ফলে যুদ্ধ অনেক মাস আগেই সমাপ্ত হয়। যার ফলে পূর্ব-পরিকল্পিত জাপান আক্রমণ সঙ্ঘটিত হলে উভয় পক্ষের যে বিপুল প্রাণহানি হত, তা আর বাস্তবে ঘটেনি। অন্যদিকে জাপানের সাধারণ জনগণ মনে করে, এ বোমাবর্ষণ অপ্রয়োজনীয় ছিল, কেননা জাপানের বেসামরিক নেতৃত্ব যুদ্ধ থামানোর জন্য গোপনে কাজ করে যাচ্ছিল।
বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বিস্তারের নেশায় কথিত পরাশক্তিগুলো প্রতিপক্ষ তথা মানুষ মারার নেশায় বুঁদ হয়ে তৈরি করে চলেছে শত শত কোটি ডলারের মারণাস্ত্র। কিন্তু বর্তমান করোনাভাইরাস মহামারির কাছে এসব যে কত তুচ্ছ তা টের পাচ্ছে মৃত্যু ও সংক্রমণের সংখ্যায় শীর্ষে থাকা আমেরিকা, কথিত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরাশক্তির দাবিদার দেশগুলো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯৪৯ সালে হিরোশিমাকে ঘোষণা করা হয় শান্তির শহর। নির্মিত হয় শান্তি স্মৃতি পার্ক। প্রতিবছরই শোক আর বেদনায় দিনটিকে স্মরণ করে বিশ্ব। সঙ্গে চলে যুদ্ধ বিরোধী প্রচার।
তারপরও থেমে নেই পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বলছে, অন্তত ৯টি দেশের কাছে রয়েছে ৯ হাজার পরমাণু বোমা। কঠোর গোপনীয়তায় পরমাণু বোমা তৈরির পরিকল্পনা। যদিও যুদ্ধ নয় শান্তির বার্তা প্রচারেই অগ্রগামী বিশ্বের এসব ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনায়করা-এসব তাদের লোক দেখানো মুখের কথা মনের কথা নয়৷
লেখক: সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা, লেখক ও কলামিস্ট।